নিজস্ব প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সবকটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মৌচাষ। শিক্ষিত বেকারদের কাছে মৌচাষ এখন বেশ জনপ্রিয়। মৌচাষের ফলে একদিকে যেমন দেশে খাঁটি মধুর চাহিদা পুরণ হচ্ছে অন্যদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। জেলার জমিগুলো এখন সরিষা ফুলে সমৃদ্ধ। আর এসব এলাকায় ঘুরে ঘুরে কৃত্রিমভাবে মধু আহরণ করছে মৌচাষিরা।
সরিষার মৌসুমে টাঙ্গাইলের দিগন্ত জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ থাকে। কৃষি বিভাগের তথ্য, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় গত বছর ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। আর এবার চাষ হচ্ছে ৪৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, অর্থাৎ জমির পরিমাণ হিসাবে এ জেলায় এবার এই রবিশস্যের আবাদ বেড়েছে ১০ শতাংশ। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো মৌমাছি সময়মতো স্বাভাবিক পরাগায়ণে ভূমিকা রাখছে ব্যাপক। এতে এবার ফলন বাড়বে গতবারের তুলনায় ২০ ভাগ।
সরিষা ক্ষেতের চারপাশে দেখা মিলছে সারি সারি মৌ বাক্স। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আসা মৌ চাষীরা সরিষা ফুল থেকে কৃত্রিম ভাবে মধু সংগ্রহের জন্য প্রায় তিন হাজার মৌ বাক্স স্থাপন করেছে›। পর্যায়ক্রমে মৌ বাক্স এবং মধূ সংগ্রহকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌচাষীদের বাক্সে পালিত মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌ বাক্সে জমা করছে।
মৌচাষীরা প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে বিক্রী করছেন। মৌ চাষের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। একই সঙ্গে দুর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু যেমন খাঁটি তেমনি সুস্বাদুও। মানের দিক থেকেও উন্নত হওয়ায় এ মৌসুমে মধুর চাহিদাও বেশি থাকে।
টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলাতেই প্রতিবছর ব্যাপক হারে সরিষার আবাদ হয়। মাত্র কয়েক বছর আগেও সরিষা চাষীরা তাদের জমিতে মৌচাষীদের মৌ বাক্স স্থাপনে বাধা দিত। তাদের ধারণা ছিল মৌমাছির কারণে সরিষা ফলন কম হবে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা সরিষা চাষীদের বোঝাতে সক্ষম হন মৌ চাষের কারণে সরিষার ফলন ভালো হয়। এরপর সরিষা চাষীরা তাদের জমির পাশে মৌ বাক্স স্থাপনে সহায়তা করে আসছেন। প্রতিবছরই টাঙ্গাইলে মৌচাষীদের আগমন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে একশ টন মধু সংগ্রহের লক্ষমাত্র নির্ধারণ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। মৌচাষের কারণে সরিষার ফলনও ভালো হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ মৌচাষী ও সরিষা চাষীদের সবধরনের সহায়তা প্রদান করছে। টাঙ্গাইল জেলার সবকটি উপজেলাতেই সারা বছরই বিভিন্ন প্রকার ফল-ফসল ও ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এখান থেকে সারা বছরই মধু সংগ্রহ করা সম্ভব।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাসার জানান, টাঙ্গাইলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মধু চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে বিনামূল্যে উন্নতমানের মৌ বাক্স বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধ রাখা হয়েছে মৌ বাক্স। প্রতিদিন সকালে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৌচাষিরা। প্রতি বছরই স্থানীয় মৌচাষি ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে টাঙ্গাইলের বাসাইল, কালিহাতী, ভূঞাপুর নাগরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মৌ বাক্স নিয়ে আসেন। একটা সময় কৃষকরা তাদের সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপনে সরিষার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করতেন। এখন তারা সেই ভুল ধারণা থেকে সরে এসেছেন। বরং ভালো ফলনের আশায় সরিষা চাষিরাই মৌচাষিদের ডেকে ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্স স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছেন।
মৌচাষি সুমন জানান, করোনার কারণে এ বছর মধুর চাহিদা অনেক বেশি এবং দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বড় বড় কোম্পানিগুলো এ বছর মধুর দাম কেমন দেবে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। ওসব কোম্পানি প্রায় সব চাষির কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করে।
মধু চাষি আফজাল জানান, ৪ বছর আগে বিসিক থেকে ট্রেনিং নিয়ে ৪০টি মৌ বাক্স দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তার ১৫০টি বাক্স হয়েছে। এ বছর থেকে ৪ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, মৌ বাক্স স্থাপনে সরিষার ফলন ভালো হচ্ছে। আগে জানা ছিল না যে, মৌমাছি পরাগায়ণের মাধ্যমে সরিষার ফলন বেশি হয়।
সান নিউজ/টিকে/এনকে