নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে আউশ আমন ধানের পর এবার বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। বীজতলা রক্ষার জন্য ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন এবং ঘন কুয়াশার হাত থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রাখছেন।
গত আমন এবং আউশ মৌসুমে বন্যা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারেননি। আর এবারের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিনে রংপুর অঞ্চলে শীতের তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারন করেছে। দিনের বড় অংশই কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
কোথায়ও চারা হলুদ আকার ধারন করে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকের বীজতলায় চারা পোড়া ও ঝলসানো রোগও দেখা দিয়েছে। নওগাঁ জেলা সদরের হোগলবাড়ি এলাকার কৃষক ময়েনউদ্দিন জানান, কয়েকদিন ধরেই সূর্যের দেখা নেই। জমিতে বোরো ধানের চারায় হঠাৎ ছোট ছোট সাদা পোকার আক্রমণ হয়েছে।
অন্য জমিতে ১০-১৫ দিন বয়সী চারাগুলো সাদা ও লালচে রং ধারন করে মরে যাচ্ছে। বারবার কীটনাশক, ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। গেল বন্যায় আমনের চারা নষ্ট হওয়ার পর এবার শৈত্যপ্রবাহে বোরোর চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম কুড়িগ্রামেও। উলিপুর উপজেলার চড়ুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক হাকিম মিয়া জানান, বন্যায় আমন গেছে।
তার আগে গত বছর বোরো ধান করে ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাননি। এখন আবার এ বছর বোরো ধান ঠিকমতো না হলে বেশ বিপদে পড়বেন। এই জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ক্ষতি কমাতে আমরা কৃষকদের সার্বিক নির্দেশনা ও সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। তবে তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রায় কমতে থাকলে ক্ষতি বেশি হবে। এমনিতেই এই এলাকায় শীত অনেক বেশি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, দেশে গত বছর বোরোর ফলন হয়েছিল ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন। এ বছর বোরোর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু হাওর এলাকায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
তবে চলমান শীতে বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে দাবি করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার মতো শীতের তীব্রতা এখনও হয়নি। যে সকল বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে সেগুলো কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে।’
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার সিংহভাগই বোরো। এ সময়ের ধানের ফলনও তুলনামূলক বেশি। যেখানে প্রতি হেক্টর জমিতে আউশ ও আমনের ফলন যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৫ ও ২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, সেখানে বোরোর ফলন ৪ মেট্রিক টনেরও বেশি।
উৎপাদনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আমন। তবে গত মৌসুমে আমনের ফলন ভালো হয়নি। আবার বোরোর উৎপাদন কমলে সেটা পুরো বছরের সার্বিক উৎপাদনে দারুণ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই এ বিষয়টি অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) কর্মকর্তারা।
সংস্থাটির উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘শৈত্যপ্রবাহের সময় বাড়তি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। তা না হলে এর প্রভাব সামগ্রিক বোরো উৎপাদনে পড়বে। মাঠ পর্যায়ে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব থেকে বাঁচতে বীজতলায় নলকূপের পানি দিয়ে তা ধরে রাখতে হবে।
এছাড়া বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা যেতে পারে। শিশির পড়লে তা ঝরিয়ে দিতে হবে। এরসঙ্গে ছত্রাক নাশক এবং প্রতিশতক জমিতে ২৮০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার দিতে হবে।
সান নিউজ/এসএ