নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার : রাখাইন রাজ্যের আদলে বাংলাদেশের কক্সবাজারে ‘বলি বাজার’ গড়ে তুলেছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে গড়ে তোলা এই বলিবাজারে প্রতিদিন চলে কোটি টাকার বাণিজ্য।
স্বর্ণের অলঙ্কার থেকে শুরু করে বেচা-কেনার তালিকায় রয়েছে কাপড়, কসমেটিক, মোবাইল ও নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স। কোটি টাকার বেচা-কেনা হলেও সরকার পাচ্ছেনা কোনও রাজস্ব। প্রশাসন বলছে, রোহিঙ্গাদের এসব দোকানগুলো পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
বিশেষ করে স্বর্ণের দোকান, মোবাইল ও কম্পিউটারের দোকানগুলোয় প্রতিনিয়ত উচ্ছেদ অভিযান চলছে। রোহিঙ্গাদের মতে, রাখাইনের মংডুর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বলিবাজার’। বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তের ৫ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে এই বাজার।
রোহিঙ্গা ছাড়াও স্থানীয় মগদের প্রধান বেচা-কেনার হাট হচ্ছে এই বলিবাজার’। বলিবাজার থেকে মিয়ানমার সরকার প্রতিবছর কোটি টাকার (কিয়েট) রাজস্ব আদায় করে। বালুখালীর পানবাজার থেকে একটু পশ্চিমে রোহিঙ্গারা গড়ে তুলেছে বলিবাজা। এ বাজারে কোনও বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেই। বাংলাদেশি ব্যবসায়িরা এ বাজারে প্রতিষ্ঠান করলেও রোহিঙ্গারা সেই দোকান থেকে কোনও ধরনের কিছু ক্রয় করে না।
রোহিঙ্গা ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারের রাখাইনে যেসব ব্যবসায়ীদের দোকান ছিল তারাই বলিবাজারে দোকান বসিয়েছে। রোহিঙ্গা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ফয়সালের কাপড়ের দোকান ছিল বলিবাজারে। ২০১৭ সালে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
সেনাবাহিনী লুট করে নিয়ে যায় তার দোকানের সব মালামাল। পরে আশ্রয় হয় উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এখন মিয়ানমারের আদলেই গড়ে তুলেছে বিশাল কাপড়ের ব্যবসা। স্থানীয় গফুর উদ্দিনের মালিকানাধীন জমিতে এখন বিশাল কাপড়ের মার্কেট। তার দোকানে প্রতিদিন ১০লাখ টাকার ওপরে বেচা-কেনা হয়।
রোহিঙ্গা ব্যবসায়ী আবদুর রশীদ বলেন, মিয়ানমারের বলিবাজারের তার জুতার দোকান ছিল। আর এখন বালুখালীর বলিবাজারে একই রকম জুতার দোকান করেছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের এই বলিবাজার নামে পরিচিতি পাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকেও গ্রাহকরা এখানে ভিড় জমায়। এক্ষেত্রে কোনও ধরনের রাজস্ব দিতে হয় না।
শুধু ফয়সাল ও আব্দুর রশীদ নয়, তাদের মতো শত শত ব্যবসায়ীদের দোকান রয়েছে এই বলিবাজারে। এই বাজারের ক্রেতাও রোহিঙ্গারেই। এখানে কোনও বাংলাদেশি ব্যবসা করতে পারেন না। কারণ, রোহিঙ্গারা আঞ্চলিকতার টানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বেচা-কেনা করে। তবে যেসব দোকানদার এই বলিবাজারে ব্যবসা করছেন তাদের রোহিঙ্গা কর্মচারী দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। একইভাবে স্বর্ণের দোকান গুলোতেও একই অবস্থা।
দোকানে রোহিঙ্গা কর্মচারী না থাকলে বেচা-কেনা খুবই কম হয়। এজন্য বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গা কর্মচারী রাখতে হয়ে তাদের। শুধু বালুখালীর বলিবাজার নয়, পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প জুড়ে বিভিন্ন অলিগলিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে স্বর্ণের দোকান। এসব স্বর্ণের দোকানে চোরাইপথে আসা মিয়ানমারের স্বর্ণ বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার।
উখিয়ার বালুখালীর স্থানীয় বাসিন্দা মুফিজ উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা খুবই অসহায়। ক্যাম্পে আমরা কোনও ব্যবসা করতে পারি না। সব রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। আমরা স্থানীয়রা কোনও দোকান করলেও রোহিঙ্গারা আমাদের এখানে আসে না।
তাই অনেকের ব্যবসা বাণিজ্য এখন বন্ধ। এছাড়াও মিয়ানমারের বলিবাজারের নামে এখনে বলিবাজার গড়ে উঠায় আমাদের বাজারের মধ্যে ব্যবসা করতে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’উখিয়ার বালুখালীর স্বর্ণ ব্যবসায়ী কেশব ধর বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে স্বর্ণের দোকান। এসব দোকানে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমারের স্বর্ণ। বাংলাদেশে তৈরি যত ভালো স্বর্ণ হোক রোহিঙ্গারা নিতে চায় না।’
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসু দৌজা নয়ন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বর্ণের দোকানগুলো প্রশাসনের নজরে রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। আরও উচ্ছেদ করা হবে, এটি চলমান রয়েছে।’
সান নিউজ/এসএ/এস