নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্সিগঞ্জ টু শরিয়তপুর বা মাওয়া-জাজিরায় প্রান্তে পদ্মা সেতুর মুল কাজ শেষের পথে। গত বৃহস্পতিবার ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে মুল অবকাঠামোর পূর্ণতা পেয়েছে। দক্ষিণ বাংলার মানুষ ঢাকা থেকে বিনা বাঁধায় স্বপ্নের সেতু দিয়ে নিজ গন্তব্যে পাড়ি দিতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে ।
এরইমধ্যে আনন্দের সঙ্গে আশারবাণী শুনাচ্ছে পদ্মার ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনার কথা শুনে। তার পরিকল্পনা ও অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা শেষপ্রান্তে। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা নদীতে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ নৌরুটে।
সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন এ সম্পর্কে জানিয়েছেন, প্রথম সেতু চালুর পর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তবে কাজ এগিয়ে রাখতে আগামী বছরের মে-জুন নাগাদ দ্বিতীয় সেতুর বিস্তারিত সমীক্ষা শুরু হবে। স্পেন, কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সমীক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত প্রথম পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামোর কাজ শেষে এখন চলছে (আপার ডেক) তৈরির করে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর মাধ্যমে সড়ক নির্মাণের কাজ। নিচতলায় (লোয়ার ডেক) চলছে রেলওয়ে স্ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে ট্রেন চলাচলের পথ নির্মাণ।
সড়ক বিভাজক, বিদ্যুতায়ন ও পরিষেবা লাইন স্থাপনে ১২ থেকে ১৪ মাস লাগবে বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষেরও নির্বাহী পরিচালক বেলায়েত হোসেন। এর পরই দ্বিতীয় সেতুর বিষয়টি আসবে বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রথম সেতুর পরিকল্পনার সময়কাল থেকেই। ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) অনুমোদন করে। ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ( একনেক)পিডিপিপি অনুমোদন করে। সেতুর নির্মাণ খরচ জোগাড় করতে একই বছরের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে সেতু বিভাগ। তখন বলা হয়েছিল, ২০১৩ সালে কাজ শুরু হবে। চীনা কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড জিটুজি ঋণে সেতু নির্মাণে আগ্রহী।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু তৈরি করার জন্য সরকারকে কোন অর্থায়ন করতে হবে না। বিল্ড, ওউন, অপারেট এন্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। অর্থায়ন করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। টোল থেকে সেই টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। দরপত্র আহ্বানের ৯ বছরেও অর্থায়নে আগ্রহী কোনও দেশ ও সংস্থা পাওয়া যায়নি।
সেতু বিভাগের প্রতিবেদনে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে পিডিপিপি অনুমোদন ও বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর যৌক্তিকতা সম্পর্কে সেতু বিভাগের মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু চালু হলে তা ব্যবহার করে দেশের মধ্য ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলায় যাতায়াতে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দের চেয়ে বেশি সময় লাগবে।
ঢাকা এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলার দূরত্ব কমাতে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।
এদিকে, ২০০৯ সালে নকশা ও প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও মাওয়া-জাজিরায় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় আরও ১ বছর পর। অর্থায়ন নিয়ে ঋণ দাতাদের সঙ্গে টানাপোড়েনে পার হয়েছে এই দীর্ঘ সময়। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় প্রথম পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হলেও দ্বিতীয় সেতুটি বিদেশি ঋণে অথবা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) করতে চায় সরকার।
সান নিউজ/এসএ