নিজস্ব প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল : মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত টাঙ্গাইলের নাগরপুরের হিন্দু পরিবারের ছয় সদস্যকে টাকার অভাবে শেষকৃত্য না করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (০৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলার ভাদ্রা গ্রামে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় একসঙ্গে ৬ মরদেহ মাটিচাপা দেওয়া হয়।
নিহতরা হলেন- ওই গ্রামের হরেকৃষ্ণ বাদ্যকার (৫৫), তার ছেলে গোবিন্দ বাদ্যকার (২৮), গোবিন্দর স্ত্রী ববিতা বাদ্যকার (২৫), মেয়ে রাধে বাদ্যকার (৪), চাচি খুশি বাদ্যকার (৫২) ও চাচাতো ভাই রাম প্রসাদ বাদ্যকার (৩০)।
পুরো ভাদ্রা গ্রামে একই পরিবারে শিশু নারীসহ ছয় সদস্য নিহতের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের বাড়িতে শতশত শোকার্ত মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। নিহতদের স্বজনের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
ইউপি সদস্য মো. বেল্লাল সর্দার জানান, নিহতের পরিবারে হরেকৃষ্ণ বাদ্যকারের স্ত্রী ঝর্না বাদ্যকার ছাড়া এবং নিহত দু’ভাইয়ের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। তারা খুবই দরিদ্র ও অসহায়। এক সঙ্গে ৬টি মরদেহ দাহ করতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। এতো টাকা ব্যয় ওই পরিবারের পক্ষ থেকে করা সম্ভব নয়। তাই সবার সিদ্ধান্তে মরদেহ সকালে একসঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। তবে স্বজনরা যদি দাহ করার দাবি জানাতেন তাহলে সবার সহযোগিতায় মরদেহ দাহ করা হতো।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান খান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে হরেকৃষ্ণ বাদ্যকারের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। এছাড়াও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে শনিবার সকালে লাশগুলো মাটিচাপা দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পর জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বাড়ি পরিদর্শন করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম, নাগরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিন মসরুর প্রমুখ।
মরদেহ মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়ে নাগরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিন মসরুর জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে হরেকৃষ্ণের পরিবারকে নগদ ২৫ হাজার টাকা, চাচাতো ভাই রাম প্রসাদ বাদ্যকারের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা এবং শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক জামাল শেখের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
তবে একই পরিবারের ছয়জনকে আসলে টাকার অভাবে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে কি না তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে তাকে কেউ অবগত করেননি। যদি নিহতের স্বজনরা কেউ তাকে অবগত করতেন তাহলে অবশ্যই প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হতো বলেও জানান তারিন মসরুর।
এর আগে গতকাল শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে অসুস্থ নাতনির চিকিৎসার জন্য স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন হরেকৃষ্ণ। তারা দৌলতপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে মানিকগঞ্জে আসছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে ঘিওর-দৌলতপুর সড়কের দৌলতপুরের মুলকান্দি এলাকায় পৌঁছালে অটোরিকশার সঙ্গে ভিলেজ লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের ৬ জনসহ সাত জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
সান নিউজ/এসএম