এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র মো. লিয়াকত আলী তালুকদারের স্বাক্ষর জাল করে ১৮ লাখ ২১ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সাবেক মেয়রের ২য় স্ত্রী ও শ্যালকসহ ২২ কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। বর্তমান মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উক্ত কর্মচারীরা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে এই অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ২৬ নভেম্বর মেয়রের সভাপতিত্বে এক জরুরী সভায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসাথে পৌর প্যানেল মেয়রকে আহবায়ক করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার জানান, পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড নামে রূপালী ব্যাংকে একটি হিসাব রয়েছে যাতে কর্মচারীদের বেতনের ১০% সহ মোট ২০% টাকা জমা রাখা হয়। চাকুরি থেকে অবসর নেয়ার সময় কর্মচারীরা এককালীন এ অর্থ পেয়ে থাকেন। তবে কর্মচারীরা এ তহবিল থেকে অবসরের আগে জরুরী প্রয়োজনে লোন নেয়ার বিধান রয়েছে। উক্ত ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উঠাতে মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর যৌথ স্বাক্ষর দিতে হয়।
মেয়র আরো জানায়. গত ২২ নভেম্বর অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর আলম জাল স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠাতে গেলে এ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পরে। এরপরেই রূপালী ব্যাংক থেকে হিসাব বিবরণী উঠালে বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর ১৭ এপ্রিল ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১০৪ টি চেকে মেয়রের স্বাক্ষর জাল করে এ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ধরা পরে।
পৌর সচিব শাহীন সুলতানা বলেন, এ বিষয়ে প্যানেল মেয়র মাহবুবুজ্জামানকে আহবায়ক করে গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে মেয়রের স্বাক্ষর জাল করার ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছে। তদন্তে ভবিষ্যত ও আনুতোষিক তহবিলে ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে কর্মচারীরা ট্রাাক হেলপার মিলন হাওলাদার ও মর্তুজ আলি তাদের চেকে মেয়রের স্বাক্ষর নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
তিনি আরো জানান, গত ২৬ নভেম্বর পৌরসভার জরুরী সভায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘থানায় এফআইআর, সাময়িক বরখাস্তসহ কেন তাদের স্থায়ী বরখাস্ত করা হবেনা’ সাত দিনের মধ্যে তার জবাব চেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে শোকজ নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সাবেক মেয়র আফজাল হোসেন রানার ২য় স্ত্রী ফটোকপি অপারেটর সামসুন্নাহার মারিয়া ও শ্যালক (১ম স্ত্রীর ভাই) সোহেল খানও রয়েছে।
অর্থআত্মসাৎ ও স্বাক্ষর জালের সাথে জড়িতদের মধ্যে ট্রাক হেলপার মিলন হাওলাদার ও মর্তুজ আলী মোট ৫১ টি চেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার ১শত টাকা, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আঃ সালাম সিকদার ১০ চেকে ১লাখ ৬৪ হাজার টাকা, টিকাদানকারী আমিনুল ইসলাম, সীমা রানী দাস, সুলতানা পারভীন ও রাশিদা খানম ১৩ চেকে মোট ২ লাখ ৫১ হাজার ১শত টাকা, কসাইখানা পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন ৫ টি চেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫শত টাকা, রোলার চালক ফিরোজ খান, ইয়াসিন আরাফাত ৭ চেকে মোট ৮৭ হাজার ৫শত টাকা, নিম্নমান সহকারী ফোরকান আমিন ৪ চেকে ৩৬ হাজার টাকা, অফিস সহায়ক মোরশেদা খানম, চান ও জাহাঙ্গির আলম ৭ চেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য সহকারী রিয়াজুল ইসলাম ২ চেকে ৩৬ হাজার, ট্রাক চালক শাকিব খান ২ চেকে ১৬ হাজার টাকা, সাবেক মেয়রের স্ত্রী ফটোকপি অপারেটর সামসুন্নাহার মারিয়া ১ চেকে ২৮ হাজার টাকা, কার্য্য সহকারী নাজমুল হাসান ১ চেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ লাইনম্যান সোহেল রানা ১ চেকে ১৮ হাজার টাকা, পাম্প চালক ইকবাল হোসেন ও সাবেক মেয়রের শ্যালক সোহেল খান ১৪ চেকে ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা এবং বিল ক্লার্ক সাহাবউদ্দিন ৩ চেকে ১ লাখ ৪১ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৮ লাখ ২১ হাজার ২শত টাকা উঠানো করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঘটনায় জড়িতদের তালিকায় থাকা হেলপার মিলন ও মর্তুজ আলী দাবি করেন, আমাদের চেকে সঠিকভাবে মেয়রের স্বাক্ষর এনেছিলাম কিন্তু বাকিরা নিজেদের বাঁচাতে অন্যায় ভাবে আমাদের নাম জড়িয়ে দিচ্ছে। আর অভিযুক্ত স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সালাম সিকদার বলেন, আসলে এসব চেকে সঠিকভাবেই মেয়রের স্বাক্ষর করেছিলেন তবে পৌরসভার নথীতে তা উল্লেখ না থাকায় তিনি আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছেন।
সান নিউজ/আরকে/এস