নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের তিনদশক পূর্তি নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানটির জন্য স্মরণীয় ও গৌরবের। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনদশক পূর্তি এ প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে মাইল ফলক। দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রেখে শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বসেরা তালিকায় স্থান করে নেবে ।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের তিনদশক পূর্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির শুভেচ্ছা বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এ কথা বলেন।
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ওয়েবিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের তিনদশক পূর্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত হয়।
ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হবে বৃটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানী আদলের বাইরে বাঙালির সভ্যতা, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, এই দেশের মাটি, পানি, মানুষের উন্নয়ন উপযোগী। এজন্য তিনি স্বাধীনাত্তোর প্রথম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয় অন্তর্ভূক্ত করেন। এরই আলোকে পরে ৭৪ সালে গঠিত ড. কুদরত-ই খুদার শিক্ষা কমিশনেও বঙ্গবন্ধুর চিন্তাপ্রসূত উচ্চশিক্ষার সুপারিশ করা হয়। স্বাধীন দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিলো দারিদ্রের কারণে মেধাবী বা প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা যেন উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে উচ্চশিক্ষায় অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু মান অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি। সরকার এদিকটিতে সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
তিনি বলেন শিক্ষায় বিশ্বমান অর্জন করতে হলে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের আন্তরিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। তিনি তিনদশক পূর্তির এই বিশেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এই ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনদশক পূর্তি ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা প্রদানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান এবং তাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ও ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। এছাড়া প্যানেলিস্ট আলোচক হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।
এর আগে সকাল ১০.৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে উপাচার্য কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। এর পরপরই ক্যাম্পাসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি হাদী চত্বরে পৌঁছিলে সেখানে বেলুন উড়িয়ে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও তিনদশক পূর্তির উদ্বোধন করেন। পরে শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল কালজয়ী মুজিব পাদদেশে এসে শেষ হয়।
সেখানে উপাচার্য এক সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যারা নানাভাবে অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা আজকের এ দিনে খুলনাবাসী তথা এতদাঞ্চলের মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানাই। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে এই অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে যেসব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী দিনে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি জরুরী ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ এবং তার জন্য আরও জমি প্রয়োজন।
পরে উপাচার্য বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রবেশ অঙ্গনে বঙ্গমাতা এর স্মৃতিস্মারক ‘মহীয়সী বঙ্গমাতা’ ম্যুরাল ও অতিথি কক্ষ উদ্বোধন করেন। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ও প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং বিশ্বদ্যিালয় মন্দিরে প্রার্থনা। এছাড়া সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের মেইন গেট, রাস্তা, শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনে আলোকসজ্জারও আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গমাতার ম্যুরালটি নির্মাণশিল্পী বিশ্ববিদ্যালয় প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মোঃ নাদিমুদৌলা এবং সহশিল্পী প্রদীপ মন্ডল।
সান নিউজ/কেএ/এনকে