নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট : চুরি হওয়া অটোরিকশা ১০ বছর পর উদ্ধার এবং এরপর থেকে জালকাগজপত্র তৈরি করে গাড়িটির দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠা বিআরটিএর দালাল সতিশ দেবনাথ ঝন্টুর হুমকিতে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপর্যস্ত বলে অভিযোগ করেছেন মোগলাবাজার থানার খালোরমুখ উলাল মহলের মরহুম খায়রুল আমীনের ছেলে মিজু আহমদ।
তিনি ঝন্টুর কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ আদায়ের ব্যাপারে গণমাধ্যম ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।পাশাপাশি তাকে গ্রেফতার করলে সিলেটের গাড়িচোর নেটওয়ার্কের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন।
শনিবার দুুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর ২০০৬ সালে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে জীবনের চাকা সচল রেখেছিলেন। তিনি সিলেট হেডপোস্ট অফিসের গাড়ি চালাতেন। অবসরের পর আমরা ৪ বোন ও ২ ভাইসহ ৮/৯ জনের বিশাল পরিবারের হাল ধরেছিলেন ঐ অটোরিকশা চালিয়ে। ৩ লাখ টাকায় নতুন কেনা অটোরিকশাটি ঐ বছরের ৫ নভেম্বর বিআরটিএ সিলেট থেকে রেজিস্ট্রেশন করা হয় (সিলেট-থ- ১২-১৮৮০)।
১ বছরের বেশি চালানোর পর ২০০৮ সালের ১৭ মার্চ বালাগঞ্জের গোয়ালাবাজারে ভাড়ায় গেলে যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা জুস খাইয়ে বাবাকে অজ্ঞান করে গাড়িটি নিয়ে যায়।
পুলিশ তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে ১৯ মার্চ সিলেটের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। ঐ বছরের ১৬ এপ্রিল এসএমপির কোতোয়ালি থানায় গাড়ি চুরির মামলা দায়ের করেন আমার বাবা ( নম্বর ৬৩/ ১৬/০৪/২০০৮)। মামলায় অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৬ জুলাই ফাইনাল রিপোর্ট দেয় পুলিশ। রিপোটে গাড়ি পাওয়া গেলে মামলা সচল হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। আরো ৫ বছর পর গাড়িটি সিলেটের হুমায়ুন চত্তর থেকে আমি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনের (পিবিআআই) সহযোগিতায় উদ্ধার করি। তখন জাল-কাগজপত্র নিয়ে গাড়িটির মালিকানা দাবি করেন সিলেট নগরীর শেখঘাট ভাঙাটিকরের জিকে নাথের ছেলে সতিশ দেবনাথ ঝন্টু।
তিনি পিবিআইতে তার কাগজপত্র দাখিল করেন। সেখানে দেখা যায় বাবার মৃত্যুর অনেক পরে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর, তিনি গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সব কাগজপত্রই ছিল জাল। ১৯ দিন পর পিবিআই কর্মকর্তারা গাড়িটি ঝন্টুর জিম্মায় দিলে আমি পরদিন বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনা থেকে আবারও গাড়িটি আটক করি এবং ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর সিলেট সিএমএম (প্রথম) আদালতে নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি ( নম্বর ১৫৪/১৭)। মামলাটি বিচারাধীন। তবে প্রাথমিক তদন্ত শেষে আদালত গাড়িটি আমার জিম্মায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, সতিশ দেবনাথ ঝন্টু বিআরটিএর একজন দালাল হিসাবে কুখ্যাত। এমনকি গাড়িচোর নেটওয়ার্কের সঙ্গেও তার গভীর যোগাযোগ। চোরাই গাড়ি ক্রয় করে জাল কাগজপত্র তৈরি শেষে বিক্রি করাই তার পেশা।
সিলেট জজকোর্টের ৫ নম্বর বারের পেছনে তার তিন্নি এন্টার প্রাইজ নামক যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেখানেই চুরিকৃত গাড়ির জাল কাগজপত্র তৈরি ও কেনা-বেঁচা হয় বলে জানা গেছে।
গাড়িটি আমার জিম্মায় দেয়ার পর থেকে সতিশ দেবনাথ ঝন্টু কখনো লোক মারফত, কখনো নিজে সরাসরি আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। গাড়ি না দিলে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করবেন বলেও বার বার হুমকি দিচ্ছেন। এতে আমরা হতাশাগ্রস্ত। যখন-তখন তার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা আমার উপর হামলার আশংকায় আমার বৃদ্ধ মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভাই এবং বোনেরা মানসিক নির্যাতনের শিকার।
এ অবস্থায় মামলা চালানোর খরচ যোগানোর বিষয়টিও আমার জন্য এখন প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া গাড়িটিও এখন লক্করঝক্কর-জীর্ণশীর্ণ। যা আয় হয় তা মেরামত খরচের পর আর থাকেই না। এ অবস্থায় জীবন চালিয়ে নেয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন। আমি সতিশ দেবনাথ ঝন্টুর কাছ থেকে গাড়ির ক্ষতিপুরণ ও মামলার খরচ আদায়ের দাবি জানাই।
আর সিলেটের গাড়িচোর নেটওয়ার্ককে গ্রেফতারে সতিশকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে র্যাবসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই। তাকে হুমকি ধমকি থেকে বিরত রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সান নিউজ/এক/এনকে