নিজস্ব প্রতিনিধি, দিনাজপুর : চলতি মৌসুমে বন্যা, বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশজুড়ে আমন ধানের আবাদ ব্যাহত হয়েছে। বর্তমানে বাজারে আমনের বাম্পার দামে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন চাষীরা। দিনাজপুর, হিলি, বগুড়া ও নওগাঁর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বতর্মানে প্রতি মণ আমন সর্বনিম্ন ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই দাম গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। বছর দুয়েক আগে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দামে প্রতি মণ আমন বিক্রি হয়েছিল। সে সময় বন্যার কারণে অধিকাংশ আমনক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধানের দাম বেড়ে যায়। গত বছর একই সময় বিভিন্ন জাতের আমন ধান গড়ে ৭০০-৮০০ টাকা দামে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।
হিলির কৃষকরা বলেন, আমরা চলতি আমন মৌসুমে স্বর্ণা জাতের ধান রোপণ করেছিলাম। শুরু থেকেই ধানের গাছ খুব ভালো ছিল, কিন্তু ঠিক যখন গাছে ধান বেরোনোর সময় হয় তখনই ধান গাছে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। তার ওপর ইঁদুরের আক্রমণও দেখা দিয়েছিল। ভেবেছিলাম এবার আমন আবাদ করে লোকসান গুনতে হবে। তবে বাজারে আমনের ভালো দাম পাওয়ায় লোকসান থেকে রক্ষা পেয়েছি।
দিনাজপুরে এবার বিনা-৭ জাতের প্রতি মণ থান ১০৪০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা ধান প্রতি বস্তা (৪০ কেজি) ১০৪০-১০৫০ টাকা এবং অন্যান্য জাতের ধানের প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০১০-১০৪০ টাকার মধ্যে। বাংলাদেশ কৃষক সমিতি দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার পর এবার কৃষকরা সরকারি দামের চেয়ে হাটে-বাজারেই বেশি দামে ধান বিক্রি করছেন।
এদিকে, উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয় আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জেলায় এ বছর ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৫ টন। এরই মধ্যে মাঠের ৫১ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত নতুন ধান জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, আমন মৌসুমের শুরুতেই বাজারে চড়া দামে ধান কিনতে হচ্ছে। গুটি স্বর্ণা ধান বর্তমানে প্রতি মণ মানভেদে ১১২০-১১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া স্বর্ণা-৫ ধান ১১৫০-১১৬০ টাকা মণ ও সম্পা কাটারি প্রতি মণ ১১৯০-১২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বগুড়ার কাহালু উপজেলার কৃষকরা বলেন, বাজারে প্রতি মণ আমন ১০৪০-১১০০ টাকা দামে বিক্রি করেছি। গত বছর এ সময় প্রতি মণ আমন বিক্রি করেছিলাম ৭০০-৮০০ টাকা দরে। বগুড়া অটো মেজর হাসকিং ও চালকল সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতি মণ স্বর্ণা ১০২০, জিরা শইল ১১৩০-১১৫০, রনজিত ১০৫০, খাটো বাজার (দেশী আমন) ১১৫০-১১৬০ টাকা দামে কিনেছি। গত বছর এ সময় এসব ধানের দাম গড়ে ৭০০-৮০০ টাকার মধ্যে ছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে দাম আরও কমে ৬০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, বাজারে আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি মণ আমন সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্যাপক পরিমাণে আমন ধান উঠলে এ দাম কমে যাবে। তবে ধানের দাম বৃদ্ধিতে আমরা সন্তুষ্ট, কারণ এতে কৃষকের উপকারই হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম বৃদ্ধিকে আমি ইতিবাচক ভাবেই দেখি। কারণ এখন যারা ধান বিক্রি করছেন তারা অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী। বর্তমানে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তা আগামী এক মাসও যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমাদের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের উপকার হবে।
সান নিউজ/এসএ