নিজস্ব প্রতিনিধি, বরিশাল : অন্যের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এবার বরিশালের মূলাদী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক কাজী মুরাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্থানীয়রা। সুদর্শন মুরাদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকবার নারী কেলেংকারীর অভিযোগ উঠলেও ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
একাধিক পরিবার দাবি করেছেন, নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে প্রবাসীর স্ত্রীদের সঙ্গে পরকীয়া সর্ম্পক স্থাপন ছিল তার নৈমেত্তিক ব্যাপার। মূলত, প্রবাসীর স্ত্রীদের সঙ্গে সর্ম্পক স্থাপন করে সেখান থেকে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিতেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে জমি দখল, টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার অভিযোগও বিস্তর। এমনকি পালিয়ে থেকেও মুলাদী থানার ওসিকে চাপের মুখে রেখেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে কারনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। মুলাদীর ওসি ফয়েজ উদ্দিন জানিয়েছেন, অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে আসলে কি ঘটেছে। তদন্তে যারা দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে আটক হন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব কাজে খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। তখন সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী সেই নারী থানায় অভিযোগ দিলেও থানা তা নেয়নি। তারও কয়েক বছর আগে, সফিপুর ও কাজীর চরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই তরুনীর সঙ্গে সর্ম্পক স্থাপন করলেও বিয়ে না করায় এলাকায় বেশ তোলপাড় তৈরি হয়েছিল। আর সর্বশেষ জড়িয়ে পড়েন প্রবাসীর স্ত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যের সঙ্গে।
জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার কথা বলে ওই জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সর্ম্পক স্থাপন করেন কাজী মুরাদ। যা এক পর্যায়ে শারীরীক সর্ম্পকে রুপ নেয়। এ নিয়ে পারিবারিকভাবে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কাজী মুরাদ ছাত্রলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সংরক্ষিত সেই ইউপি সদস্যের পিছু ছাড়েননি। স্থানীয়রা তাদের অবাধ মেলামেশার বিষয়ে আপত্তি জানালে দলবল নিয়ে তাকে মারধর করতেন।
তবে কয়েকদিন আগে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী ওই ইউপি মেম্বার কাজী মুরাদকে বিয়ে করার কথা বললে তিনি অস্বীকার করেন। আর তাতেই বেকে বসে মুলাদী থানায় ধর্ষণ মামলা দায়েরের জন্য যান সেই ইউপি মেম্বার। কিন্তু ওসি ফয়েজ উদ্দিন তাকে কাজী মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে নিবৃত করেন। শেষে কাজী মুরাদের বাসায় গিয়ে উঠতে চান সেই নারী। শেষে লোকলজ্জার ভয়ে এবং ধর্ষণ মামলা থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে চলে যান কাজী মুরাদ।
এদিকে সেই ইউপি মেম্বারের শ্বশুর থানায় অভিযোগ দেন, তার পুত্রবধূ ও ইউপি মেম্বার এবং কাজী মুরাদ তার ছেলের ৩৫ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছেন। এর মাধ্যমেই ফাঁস হয়ে যায় মুরাদের অপকর্ম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মুরাদ উপজেলার পাতারচর গ্রামে আশ্রায়ন প্রকল্পের সরকারি জমি দখল করেছেন। তাছাড়া, ২০১৯ সালে সফিপুর, নাজিরপুর ও বাটামার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে টাকার বিনিময়ে ছাত্রদল, জামায়াত-বিএনপির পরিবারের লোকদের হাতে তুলে দিয়েছেন ছাত্রলীগের পদ। যা নিয়ে সেই সময়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ আকন, সাইফুল মৃধা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ইমাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ ও সুজন নলী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতিকার চেয়েছিলেন।
এ বিষয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা কাজী মুরাদ জানিয়েছেন, গত ইউপি নির্বাচনে আমি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। মনোনয়ন পাওয়ার ৪/৫ দিন পরে সেই মনোনয়ন বাতিল করে দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আমার স্থানে কামরুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে চাল চুরি, গম চুরির মত বিভিন্ন দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছে। সেই বিষয়ে আমি সরব হওয়ায় ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে এসব বদনাম ছড়াচ্ছে। মূলত এসব অভিযোগ কোনটাই সত্য নয়।
সান নিউজ/এমএইচ/এনকে/এস