নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট : মরণব্যাধি এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্বামী। তার সংস্পর্শে এসে নিজে এবং তার একমাত্র সন্তানও এখন এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছেন। সেই সঙ্গে সইতে হচ্ছে শাশুড়ি দেবর ও জা’র নির্যাতন। স্বামীর মৃত্যুর পর এখন এক সময়ের আপনজনদের নিষ্ঠুরতায় তাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণ সুরমার তেতলী ইউনিয়নের টিল্লাবাড়ির মৃত কাওসার আহমদের স্ত্রী সেজনা আক্তার।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “এতিম সন্তান আব্দুর রহমান ইয়াছিরকে নিয়ে দানশীল মানুষের সহযোগিতায় কোনমতে দুমুঠো আহার জোগাড় করে বেঁচে আছি। স্বামী সৌদী প্রবাসী ছিলেন। এইডস আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার সংস্পর্শে আসায় এখন আমিও এইডস আক্রান্ত, এমনকি আমার একমাত্র সন্তানও। স্বামীর ভিটে ছাড়া আমাদের অন্য কোন অবলম্বন নেই। এখন সেই ভিটে থেকে তাড়িয়ে দিতে বারবার আঘাত করা হচ্ছে। আমার মৃত স্বামীর মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী মিলে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করছেন। তারা আমার সাজানো সংসার তছনছ করেছেন। মূল্যবান জিনিসপত্রও ধ্বংস করেছেন। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে এখন বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। তারা একাধিকবার আমাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। এমনকি সালিশে বসে সালিশানদের নির্দেশকেও পাত্তা দেন নাই তারা।”
“এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বামীর আপন ভাই মো. ফয়ছল আহমদ, আত্মীয় মো. জসিম উদ্দিন, রুবিনা বেগম ও জমিলা খাতুন আমার ঘরে অনাধিকার প্রবেশ করেন। ওই দিনও শারীরিক নির্যাতন ও হুমকি ধমকি দিয়েছেন। এক পর্যায়ে টেনে হেঁচড়ে মাটিতে ফেলে আমাকে লাঞ্চিত করে। চুল ধরে কিল ঘুষি লাত্থি মেরে আমাকে জখম করে। আসবাবপত্র বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। আমার নাবালক সন্তানসহ আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয় ও প্রাণে বাঁচতে চাইলে স্বামীর বসত ভিটায় ফিরে না আসার হুমকি দেয়” বলেন সেজনা আক্তার।
তিনি আরও বলেন, “এখন আমার কোন ভিটে-মাটি বা কৃষি জমিও নেই। তবে আমার স্বামীর সবকিছুই আছে। তারা সেসব দখল করতেই আমাদের উপর এই নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমি ঐদিনই দক্ষিণ সুরমা থানায় অভিযোগ দাখিল করলেও ৯ মাস ধরে রহস্যজনক কারণে তা তদন্তাধীন। তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার এসআই মামুন মিয়া ‘পারিবারিক বিরোধ’ বলে আইনী সহযোগিতা দিচ্ছেন না। অভিযোগও রেকর্ড করছেন না।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “পারিবারিক বিরোধ কি আইন বিরোধী নয়? তাহলে কেন আইনী সহযোগিতা থেকে আমরা বঞ্চিত? কেন নির্যাতনকারীদের পক্ষে কাজ করে পুলিশ? এসব প্রশ্নের জবাব আমাকে কে দিবে? এখন অভিযোগ দেয়ার অজুহাতে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছেতো বাড়ছেই। তাদের বেপরোয়া হুমকিতে আমরা আজ অসহায়।”
সেজনা বলেন, “আমি ও আমার ছেলে এইডসে আক্রান্ত, উপার্জনহীন সংসার। স্বামীর পরিবারের নির্যাতনে ভিটে মাটি ছাড়া। আইনী সহযোগিতায় জীবনের নিরাপত্তা ও ভিটে মাটি ফেরতের প্রত্যাশায় অভিযোগ দিয়েছিলাম পুলিশে। কিন্তু রক্ষকদের রহস্যজনক নিরবতায় শিশু সন্তানসহ আজ আমি কোথায় যাবো কার কাছে যাবো, কিভাবে বাঁচবো তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের মা-ছেলের জন্য কি দেশ, দেশের মানুষ বা আইন বলতে কিছুই আর থাকলোনা? তাহলে এই স্বাধীন দেশের আইন, পুলিশ কার জন্য?”
মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া শিশু সন্তানসহ সেজনা বেগম সাংবাদিকদের মাধ্যমে স্বামীর পরিবারের নির্যাতন নিপীড়নসহ পুলিশের অসহযোগিতা ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন এবং আইনী প্রক্রিয়ায় স্বামীর ভিটায় প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে এসএমপি কমিশনার জেলা প্রশাসন, দক্ষিণ সুরমা থানা, উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও সাংসদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তার শিশুপুত্রও পিতার ভিটায় ফিরে আসতে সবার সহযোগিতা চেয়েছে।
সান নিউজ/এক/এনকে/এস