এনামুল কবীর, সিলেট : সবুজ টিলায় দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ি মনোরম হাতছানি দিয়ে ডাকে সৌন্দর্য পিপাসুদের। তাই প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নামে পর্যটকের ঢল। তবে ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে চলতে হয় তাদের। কারণ, আশপাশে নেই কোনো পুলিশ ক্যাম্প। একটু বেশি সময় থাকার ইচ্ছা থাকলেও নানা দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরতে হয় আসা পর্যটক ভাই-বোনদের।
শহরতলীর তারাপুর চা বাগান সংলগ্ন গোয়াবাড়ি ওয়াকওয়ে সিলেটের নাগরিক বিনোদনে নতুন সংযোজন। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এ প্রকল্প আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। টিলা-পাহাড়ের গায়ে সবুজ দুটি পাতা একটি কুঁড়ির চা-গাছের ডগায় বিকেলের সোনা রোদে দারুণ আকর্ষণ মানুষের।
আর তাই প্রায় প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত এখানে ভিড় করেন অসংখ্য শিশু-কিশোর তরুণ-যুবা ও বয়স্ক নারী-পুরুষ।
বিকেল ৪টার পর থেকে দলে দলে তারা আসতে থাকেন। হাঁটেন, ছবি তুলেন। বাদাম চিবুতে চিবুতে বা আইসক্রিমে জিব-ঠোঁটের আলতো ছুঁয়ায় কাটিয়ে দেন কর্মক্লান্ত বিকেলের অবসাদ। তবে এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে গৃহবধূ গণধর্ষণকাণ্ডের পর এই চমৎকার জায়গায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে জনমনে।
এ সময়ে সিলেটসহ সারাদেশে ধর্ষণ, যৌন নীপিড়ন ও নারী নির্যাতন অনেকটা আশংকাজনক হারে বেড়েই চলেছে। সারাদেশে সম্প্রতি বহুল আলোচিত এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে স্বামী-স্ত্রীর বেড়াতে যাওয়াকে উপলক্ষ করে।
পাঠানটুলার গোয়াবাড়ি এলাকাটিও অনেকটাই নিরিবিলি পরিবেশে। তারাপুর চা বাগানের সুবজ টিলার ঢালুতে প্রায় দেড় কিলোমিটারের এই ওয়াকওয়ে পর্যটকদের জন্য খুব লোভনীয়। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের দারুণ পছন্দ জায়গাটি।
সম্প্রতি এক বিকেলে সরজমিনে দেখা গেছে, বেড়াতে আসাদের মধ্যে তরুণ-যুবাদের পাশাপাশি সংখ্যায় কম হলেও বেশ কয়েকজন কিশোরী-তরুণীও উচ্ছলতায় মেতেছে। প্রিয়জনের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কয়েকজন স্থানীয় যুবকের সাথে কথা বলে জানা গেলো, স্ট্রিটলাইটের খুঁটি বসানো হলেও এখনো আলো জ্বলেনি। কিন্তু তবু সন্ধ্যা থেকে রাত ৮/৯টা পর্যন্ত এখানে তরুণ- তরুণীদের দেখা যায়। এতে নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই শংকায় আছেন। আর তাই স্থানীয় মোহনা সমাজকল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তারা এলাকার কাউন্সিলরের সহযোগিতায় সচেতনতামূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সন্ধ্যার পর এখানে না থাকার আহ্বান জানিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। নিজেরাই নজরদারির জন্য একটা বিশেষ টিম গঠন করে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন।
তবে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে ওয়াকওয়েতে ঘুরতে আসা দুই তরুণী, পাঠানটুলার ফাম্মি ও রুবি বললেন, সেরকম কিছু এখনো ঘটেনি। তবে ঘটতে কতক্ষন? বিপদতো বলে-কয়ে আসেনা। এখানে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারলে সবার জন্যই ভালো হয়।
বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছও। সান নিউজের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। এখানে একটা পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ রয়েছে। লাইটিং ও রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গেলে সেটির কার্যক্রম আরো জোরে শুরু হবে। আপাতত জায়গার অভাব। তবে তিনি জানালেন বর্তমানে স্থানীয় মোহনা সমাজকল্যাণ সমিতির সদস্যরা এলাকার সচেতন মানুষজনকে নিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছেন। তাদের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগও রয়েছে।
গোয়াবাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ( মিডিয়া ) বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের টহল পুলিশ দেখছে। তারা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। আর পুলিশ ক্যাম্প বসানোর কিছু সরকারি নিয়ম কানুন আছে। সেগুলো মেনে এলকাবাসী অগ্রসর হলে এবং সরকার সিদ্ধান্ত নিলে তা অবশ্যই হতে পারে।
এই ওয়াকওয়ে শুধু নাগরিকদের বিনোদনই দিচ্ছেনা, কিছু কর্মসংস্থানের উপায়ও হয়েছে। যেমন, বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বসেছে ২/৩টি চরকি। সামান্য দুরত্ব রেখে বসেছে একাধিক চটপটির দোকান। আর সব থেকে বড় হচ্ছে, তুঙ্গে থাকা মোবাইল ফটোগ্রাফির এই সময়েও ক্যামেরা দিয়ে ছবিতোলার কাজ করে গোয়াবাড়ি এলাকার অন্তত ১০/১২ জন তরুণ-যুবক বেশ ভালোই আয় করছেন।
সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে আমরা এবং এলাকাবাসী এ ব্যপারে মোটমুটি নজরদারি করছি। তবে সবচেয়ে ভালো হয় পুলিশ থাকলে। এ ব্যাপারে তিনি কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সান নিউজ/এক/বিএস