নিজস্ব প্রতিনিধি, ফেনী : ফেনীর সোনাগাজীতে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল একই গ্রামের জহিরুল ইসলাম ওরফে জিয়া। কিন্তু একপর্যায়ে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় সোনাগাজী থানায় জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ওই তরুণী।
এরপর পুলিশ জিয়াকে গ্রেফতার করলেও তাকে জামিনে ছাড়াতে আইনজীবী ও স্বজনরা নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে জিয়া রাজি হন ওই তরুণীকে বিয়ে করতে।
গত ১ নভেম্বর ওই তরুণীকে বিয়ের শর্তে জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে বলে জানান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আর এ বিয়ে আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেনী জেলা কারা কর্তৃপক্ষকে। তবে জামিন পেতে অবশ্যই আসামিকে আদালতে বিয়ের প্রমাণপত্র হাজির করতে হবে।
আসামি জিয়ার বাবা আবু সুফিয়ান জানান, তার ছেলে বর্তমানে ফেনী কারাগারে বন্দি আছে। আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) তিনি মেয়ের বাবাসহ ওই কারাগারে গিয়েছিলেন বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করতে। কিন্তু জেলার না থাকায় বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত করা যায়নি। আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হবে। জামিনের পর অনুষ্ঠান করে বউকে ঘরেও তুলবেন।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা কারাগারের সুপার আনোয়ারুল করিম বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমরা হাইকোর্টের একটি আদেশ পেয়েছি। এখন নিম্নআদালতের একটি আদেশের অপেক্ষায় আছি। তবে দুপক্ষের পরিবারের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে।
তারা বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী সপ্তাহে বিয়ের দিন-তারিখ ধার্য করা হবে। আদালত এক মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন। বিয়ে কখন কীভাবে হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে জেল সুপার বলেন, দিন-তারিখ বর ও কনে পক্ষ ঠিকঠাক করে নেবে। কারাগারে শুধু ৫ মিনিটের কাজ। কাবিননামায় স্বাক্ষর করে বাকি কাজ তারা বাইরে সারবে।
সুপ্রিমকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পি বলেন, গত ৩০ জুন এ মামলার চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরে আসামি উচ্চআদালতে জামিন নিতে এলে বিয়ের শর্ত দেন আদালত। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিয়ে হয়ে উচ্চআদালতে প্রমাণপত্র এলে আসামিকে জামিন দেওয়া হবে। আদালত মনে করেছে তরুণী এ বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ দুই পরিবারের দিকে তাকিয়ে হয়তো সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালত। সামাজিকতার কথা চিন্তা করেছেন, তবে অপরাধ কমার ক্ষেত্রে এটি কোনো ভূমিকা রাখবে না। আমি মনে করি অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে। আদালত মনে করেছে, যদি আসামি বিয়ে করে, তা হলে এটি ন্যায়বিচার হবে। ভুক্তভোগী বিয়ের মাধ্যমে তার অভিযোগ তুলে নেবে।
উচ্চআদালতের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়াটা সঠিক কাজ। কিন্তু মেয়েটির সামাজিকতার দরকার আছে। রায়ের মাধ্যমে মেয়েটি স্বীকৃতি পেল। সাধারণত এসব বিয়ে টিকে না। তবে কাবিননামায় মোহরানার পরিমাণ বেশি হলে হয়তো বা তার ভয়ে ভিন্ন কিছু চিন্তা করবে না স্বামী।
সান নিউজ/এম/এস