এনামুল কবির, সিলেট : মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য সিলেট শহরের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির মুর্তিমান আতঙ্ক এসআই আকবর রাতের আঁধারে পিটিয়ে হত্যা করে রায়হান নামক এক যুবককে। সিলেট নগরী, সিলেট জেলা থেকে শুরু করে সারাদেশে তীব্র নিন্দা,আন্দোলন ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সিলেটের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের তীব্র প্রতিবাদের মূখে আকবরকে জেলার পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
নির্যাতনে নিহত রায়হানের অবিভাবকসহ সচেতন দেশবাসীর একটাই প্রশ্ন ? কিভাবে কাদের নেপথ্যে সহযোগীতা ও প্ররোচনায় একটি দেশসেরা শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর শত শত সদস্যের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে আকবর পালিয়ে গেল পুলিশ লাইন থেকে ! আকবর এতদিন কোথায় ছিল ? কারা তাকে এতদিন চলার পথে সাহ্যয্যে দিয়ে আসছে? কারণ যেহেতু পালাতক আকবর ঘুরেফিরে সিলেট এলাকায়ই লুকিয়ে ছিল তাহলে তাকে কেন ধরতে পারলোনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ?
সোমবার (০৯ নভেম্বর) সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে সরাসরি পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ভারতের খাসিয়ারা সম্প্রদায়ের লোকজন আকবরকে কানাইঘাট এলাকার রহিম উদ্দিন (৩৪) নামের এক ব্যাক্তির হাতে তুলে দেয়। তারপর রহিম উদ্দিনের সঙ্গে সে এলাকার তার বন্ধুদের সহযোগীতায় আকবরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
জেলার কানাইঘাট উপজেলার ডনা এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন। সোমবার রাত ৯টায় ফেসবুক চ্যানেলের এক লাইভ অনুষ্ঠানে এসে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ও তার ৫ বন্ধুর হাতেই আকবরকে তুলে দিয়েছিল খাসিয়ারা। রহিম উদ্দিন ছাড়াও তার অন্যান্য বন্ধুরা সে লাইভ প্রোগ্রামে এসআই আকবরকে আটক করার সত্যতা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন।
রহিম ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে এসে জানান, আমি সীমান্ত এলাকার মানুষ হিসাবে ওপারের খাসিয়াদের সাথে আগে থেকেই ছিল চেনা-জানা। গত ২দিন আগে থেকেই আকবরকে আটক করার মিশনে নেমেছিলাম পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রের নির্দেশে। তবে তিনি বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গোপন রেখেছিলেন। কারও সাথে এ বিষয়ে কোন কিছু বলেননি।
এমনকি তার বিশ্বস্ত বন্ধুদেরও কিছু বলেন না। গোপনেই তিনি খাসিয়াদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন। সোমবার সকালে সীমান্তের ওপার থেকে খাসিয়ারা আকবরকে বেঁধে নিয়ে আসে সীমান্তে। রহিমের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়। তিনি বন্ধুদের নিয়ে দ্রুত পৌঁছে যান নির্ধারিত স্থানে। খাসিয়াদের কাছ থেকে নিজের আয়ত্তে নিয়েই তিনি পুলিশকে খবর দেন। ৯টার দিকে পুলিশ এসে দ্রুত আকবরকে নিয়ে যায়।
রহিম বলেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। আকবরের বিষয়ে অন্য বন্ধুদেরও আগে জানাননি। আকবরকে নিজের হাতে পাওয়ার পরেও তার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেননি। রহিমের আরেক সহযোগী আশুক জানান, তিনিও আগে এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না।
রহিমের অনুরোধে গিয়েছিলেন সেখানে। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার সময় জানতে পারেন এই সেই আকবর। রায়হানের ঘাতক। যাকে গত প্রায় ১ মাস ধরে খুঁজছিলেন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এদিকে, কুখ্যাত আকবর গ্রেপ্তারের নেপথ্য কারিগর হিসাবে রহিমের নাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা উল্লাসিত বলেও জানিয়েছেন তার বন্ধু আশুকসহ অন্যান্যরা।
উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতন করে এসআই আকবরের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য।পরদিন মূমূর্ষ রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
আকবর ও তার সহযোগীরা প্রথমে গণপিঠুনিতে ছিনতাইকারী নিহত বলে চালিয়ে দিতে চাইলেও রায়হানের মা ও স্ত্রী তান্নি পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মামলা দায়ের করেন। ১৩ অক্টোবর থেকে আকবর পলাতক।
সান নিউজ/এক/এসএ