নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনা : লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। চাইলে যে কোনো বয়সেই লেখাপড়া করা যায়। এই কথারই জীবন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখা দিলেন পাবনার ৭২ বছর বয়সের আলহাজ্ব মো. রওশন আলী। জীবনের শেষ বয়সে এসে এমবিএ পাশ করে রীতিমতো সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএর সন্ধ্যাকালীন কোর্সের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন বৃদ্ধ রওশন। আর এবারে ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেয়ে উর্ত্তীণ হন তিনি। তার বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের বান্নাইপাড়া গ্রামে।
১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া এই বৃদ্ধ সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর সুজানগরে শহীদ দুলাল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। এরপর ইচ্ছা থাকার পরও কর্মজীবনে প্রবেশ করায় তিনি আর পড়াশুনা করতে পারেননি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসরগ্রহণ করলেও পড়াশুনা সম্পূর্র্ণ না করতে পারার কষ্টটা তার রয়ে যায়। এমন সময় সিদ্ধান্ত নেন এমএ পাশ করবেনই তিনি। মূলত সেই ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন।
রওশন আলীর দুই ছেলে। এর মধ্যে বড় ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা সম্পূর্ণ করে বর্তমানে পাবনার একটি কলেজের বাংলা বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেব কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজ থেকে পড়াশুনা সম্পূর্ণ করে চিকিৎসা পেশায় রয়েছেন।
এদিকে এ বয়সে এসেও লেখাপড়া করে এমএ পাশ করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার স্ত্রী,২ ছেলে, নাতি-নাতনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ এলাকাবাসী।
শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রওশন আলী বলেন, জীবনে সফল হতে প্রত্যেকের পড়াশুনা সম্পূর্ণ করা উচিত। তিনি মনে করেন,জ্ঞান থাকলে তবেই সফল হওয়া যায়। শিক্ষা জীবনে সাফল্য আনার পাশাপাশি দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া এত বয়সে এসে প্রযুক্তির নানা বিষয়ের সঙ্গে আরো পরিচিত হতে চান বলেও জানান বৃদ্ধ রওশন আলী।
রওশন আলী বলেন, আজ আমার জীবনের সকল সাধ পূর্ণ হয়েছে। এখন মরেও শান্তি পাব। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ইচ্ছা থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, তার প্রকৃত দৃষ্টান্ত আমি নিজে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যাকালীন কোর্সের সমন্বয়কারী এবং সাবেক প্রক্টর ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জান বলেন, মানুষের চেষ্টার অসাধ্য কিছু নেই। রওশন আলী এটার যথার্থতা প্রমাণ করেছেন।
সান নিউজ/রাকিব/এসএম