এনামুল কবীর, সিলেট : ঘেন্নায় আপনার ভেতরটা গুলিয়ে উঠতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, গেলো সেপ্টেম্বরটা সিলেটবাসীর জন্য একটা জঘন্য মাস হিসাবে লাল কালিতে মার্কিং করে রাখার মতো। কারণ, এ মাসটিতে সিলেট জেলা ও মহানগরে প্রতিদিন গড়ে ১ জন করে নারীর ইজ্জত লুন্ঠিত হয়েছে। অন্তত থানায় দায়েরকৃত মামলার পরিসংখ্যান এ স্বাক্ষিই দিচ্ছে। তবে অক্টোবরের হিসাবেটা এখনো পাওয়া যায়নি।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দিন দিন এই সামাজিক ব্যাধি বেড়েই চলেছে। গত আগস্টে সিলেট জেলার ৯টি থানায় ১৮ ও সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকার ৬টি থানায় ৬টিসহ মোট ২৪টি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে আরো ৬টি বেড়ে রেকর্ড হয়েছে ৩০টি।
তবে জেলায় আগস্টের চেয়ে ১টি মামলা কমেছে। এ মাসে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে মোট ১৭টি। কানাইঘাট থানায় সেপ্টেম্বরে ধর্ষণের কোন মামলা হয়নি। আর সাবাই জানেন, এদেশে এই জঘন্য কুকর্মের শিকারদের কেউ সহজে থানায় যেতে চায়না। মহানগরের চিত্রটা আগস্টের তুলনায় রীতিমতো ভয়ংকর। সেপ্টেম্বরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ থানায় মোট ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৩টি। মানে, ৩০ দিনের সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিদিনই সিলেটের কোন না কোন নারীর ইজ্জত লুন্ঠন হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটায় কয়েকজন লম্পট-সন্ত্রাসী। তাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কেউকেউ তথাকথিত ‘রাজপথ কাঁপানো নেতা’ও। ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সিলেট বিভাগসহ সারাদেশে। নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব। গ্রেপ্তার করা হয় পালানোর চেষ্টায় থাকা প্রত্যেক ধর্ষক ও তাদের সহযোগীদের। একই সাথে দেশের অন্যান্য জেলায় ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেন সরাদেশের মানুষ। ধর্ষকদের ফাঁসির আইনের দাবি জোরালো হয়ে উঠে। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি ৬ মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে দেশের মন্ত্রীসভা।
সেপ্টেম্বরে সিলেট জেলার কানাইঘাট ছাড়া অন্য ৯টি থানায় মোট ১৭টি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ থানায়, মোট ৫টি। এরপরের অবস্থানে ৪টি থানা। ২টি করে মামলা হয়েছে ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে। ১টি করে ধর্ষণের মামলা হয়েছে বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোয়াইনঘাট থানায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ৬টি থানায় গণধর্ষণ মামলাসহ মোট ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১৩টি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি, ৪টি করে মামলা হয়েছে হযরত শাহপরাণ (রা.) ও এয়ারপোর্ট থানায়। দক্ষিণ সুরমায় এ সংক্রান্ত অভিযোগে মামলা হয়েছে মোট ৩টি। কোতোয়ালি থানায় ২টি। আশার কথা, জালালাবাদ ও মোগলাবাজার থানায় ধর্ষণ সংক্রান্ত কোন মামলা হয়নি। পরিসংখ্যানটা কেবল থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ অনুযায়ী। সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে, মানসম্মান হারানোর ভয়ে এ ধরণের অনেক অপরাধ চাপা পড়ে থাকে। আর তাই সেপ্টেম্বরে যে গড়ে প্রতিদিন একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি, তা নিশ্চিত বলা যায়না।
তথ্যগুলো নিশ্চিত করে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান বলেন, কানাইঘাট ছাড়া জেলার অন্য ৯টি থানায় মোট ১৭টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে সেপ্টেম্বরে। এর প্রতিটি মামলায় একাধিক আসামী গ্রেপ্তারও হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। জনগনকে সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে কাজ করলে, বখাটে বা ধর্ষকদের ব্যাপারে সবাই কঠোর হলে এই প্রবনতা হ্রাস পাবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার এ ব্যাপারে বলেন, ধর্ষণের বিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সেটি চলবে। তিনি এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা কামনা করে বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরোধের পাশাপাশি এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন এবং কঠোর হতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি সচেতনতার কাজে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সান নিউজ/এক/এস