নিজস্ব প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শেষ হচ্ছে বুধবার রাত ১২টায়। ইতিমধ্যে বরিশালের জেলেরা প্রস্তুতি নিয়েছে নদীতে যাওয়ার জন্য। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে বরিশালের উপকণ্ঠের কয়েকটি জেলেপল্লী ঘুরে দেখা গেলো ব্যস্তার অন্ত নেই। দম ফেলার ফুসরত নেই মাঝিদের। হাক-ডাকে সরগরম করে রেখেছে এলাকা। নৌকা-ট্রলারে তোলা হচ্ছে জাল, তৈজসপত্র।
নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চল কার্যালয় জানিয়েছে, অভিযান শুরুর পর থেকে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ১৭টি নৌ ইউনিটের অভিযানে প্রায় ২৫৮ কোটি টাকার অবৈধ জাল ও মাছ জব্দ করা হয়েছে। এই ২১ দিনে গ্রেফতার হয়েছে ৭০৯ জন।
নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন মনে করেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ রক্ষা অভিযান শুরুর পর থেকে আমরা এখন পর্যন্ত সফল। যদিও জনসংখ্যা বা জলরাশির আনুপাতিক হারে নৌ-পুলিশের জনবল কিছুটা ঘাটতি রয়েছে; এটি শুধু বরিশালে না, পুরো বাংলাদেশে। কারন নৌ-পুলিশের যাত্রাতো বেশি দিনের না।
এই অঞ্চল প্রধান বলেন, জনবলের হিসেবে বাদ দিলেও এবারের ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমরা বেশ সফল হয়েছি। যদিও অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে নৌ-পুলিশ হামলার শিকার হয়েছে। ভোলা, হিজলা, বরিশাল সদরের মত বিভিন্নস্থানে কয়েক দফায় হামলার শিকার হয়েছে বলে পুলিশ জানান কফিল উদ্দিন।
ছয়টি জেলা নিয়ে নদীমাতৃক বরিশাল বিভাগে ১৫টি নৌ-পুলিশ ইউনিট রয়েছে। আরও দুটি রয়েছে ভাসমান বা অস্থায়ী ইউনিট। ইউনিটগুলো হলো, বরিশাল জেলার সদর নৌ-থানা, নাজিরপুর নৌ-থানা, হিজলা নৌ-থানা, কালীগঞ্জ নৌ-থানা, বাকেরগঞ্জ উপজেলার চামটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি, ভোলা জেলার পূর্ব ইলিশা নৌ-থানা, মির্জাকালু নৌ-ফাঁড়ি, পটুয়াখালী জেলার পায়রাকুঞ্জ নৌ-পুলিশ ইউনিট, কালাইয়া নৌ-পুলিশ ইউনিটে, পায়রাবন্দর নৌ-পুলিশ ইউনিট, দশমিনা নৌ-ফাঁড়ি, কুয়াকাটা নৌ-ফাঁড়ি, বরগুনা জেলার কাকচিড়া ইউনিট, চরদুয়ানী ইউনিট, নিদ্রাসখিনা পুলিশ ফাঁড়ি। এছাড়া হিজলা উপজেলার আওতাধীন মেঘনা নদীতে দুটি ভাসমান পুলিশ ইউনিট রাখা হয়েছে।
এই ইউনিটগুলোয় ১৪ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ বর্গ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করেছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য রয়েছে, ২৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই সময়ে ১১ হাজার ৭০০ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। যার মূল্য প্রায় ৫৮ লাখ ১০ হাজার ৩ শ টাকা।
নৌ-পুলিশের পরিদর্শক আবু তাহের জানিয়েছেন, অভিযানে ২৮২ টি নৌকা, ৬০টি ট্রলার এবং ৩টি ফিশিং বোট আটক করা হয়েছে। মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৭০৯ মাঝি। যার মধ্যে ৯৪ জনকে ভ্রাম্যমান আদালতে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। বাকি ৬১৫ জন নিয়মিত আদালতে দায়ের করা ৫২টি মামলায় আসামী করা হয়েছে।
আবু তাহের আরও বলেন, অভিযানে আমি নিজেও হামলার শিকার হয়েছি। তবে সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে আমরা জেলেদের নদীতে মাছ শিকারে নামা থেকে বিরত রাখতে পেরেছি। কারন যারা অভিযানের সময়ে আটক হয়েছেন বা বিভিন্ন ধরণের শাস্তির আওতায় এসেছেন তারা পেশাদার জেলে না। তাদের অধিকাংশই মৌসুমী জেলে। তিনি জানিয়েছেন, জব্দকৃত মাছ এতিমখানায় এবং উদ্ধারকৃত জাল ভ্রাম্যমান আদালতের অনুমতিক্রমে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের প্রজনন মৌসুমের ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়। যা শেষ হচ্ছে ৪ নভেম্বর (আজ) রাত ১২ টায়। এই সময়ের মধ্যে নদীতে মাছ শিকার, ইলিশ বিপনন ও সংরক্ষণ ছিল আইনত দন্ডনীয়।
সান নিউজ/এমএইচ/এনকে