নিজস্ব প্রতিনিধি, সিলেট : আগামী ১ জানুয়ারি থেকে জনগণের প্রত্যাশিত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট মহানগর শাখা।
রোববার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়েছে নিসচা সিলেট মহানগর শাখা।
এ সময় নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিসচা সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি এম ইকবাল হোসেন।
উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নিসচা কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মিশু, মহানগরের সহ সভাপতি কামরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাদি পাবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান খান মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুজ্জামান তফাদার মুক্তার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে আমরা থেমে থাকিনি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিসচা শুরু থেকে একটি সময়োপযোগী আইনের দাবি জানিয়ে আসছিল। পাশাপাশি শুধু আইন করলে হবে না, সড়কে আইন মানতে মানুষকে সচেতন করার ওপরও নিসচা জোর দিচ্ছিল। সড়ক পরিবহন আইনটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে। আইনের খসড়া সরকারি ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত থাকে দীর্ঘদিন। জনগণের মতামত দেয়ার সুযোগ ও রাখা হয়েছিল। নিরাপদ সড়কের দাবিতে যেসব সংগঠন কাজ করে তাদের প্রতিনিধিরা ও মতামত দিয়েছেন। এছাড়াও সরকার বিভিন্ন সময় ১৯৮৩ সালে প্রণীত আইনটি ও সময় উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। অনেকটা সময় পেরিয়ে সড়কের বিশৃঙ্খলা অবস্থার বাস্তব চিত্র এবং ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুইজন শিক্ষার্থী বাসচাপায় মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন এ আইনটি পাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
অবশেষে কোন চাপের মুখে নতি স্বীকার না করে সরকার এই আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করে ২০১৮ সালে। এর প্রায় ১৫ মাস পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর শুরু করে সরকার। প্রথম ১৪ দিন স্থানীয় মাত্রায় এই আইনের প্রয়োগ ছিল। পরবর্তীতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিতে আইনের কয়েকটি বিষয়ে পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরবর্তীতে করোনার কারণে এই আইন যথাযথ প্রয়োগের সময়সীমা বৃদ্ধি করে এবং ৩১ ডিসেম্বর২০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রয়োগে উদ্যোগ নেয় তখনই পরিবহন সেক্টরের একটি চক্র বাঁধার সৃষ্টি করে আসছে। তারা নতুন করে নানা ধরনের দাবিদাওয়া তুলে ধরছে। শুধু তাই নয় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে তারা। এমনকি নিসচা'কে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে, যা সত্যিই দুঃখজনক। নিসচা মনে করে নতুন আইনের বিষয়ে তারা কোনো প্রস্তুতি ইচ্ছে করে নেয়নি এবং নিচ্ছেও না। নিসচা দুঃখের সঙ্গে বলছে যে, সড়কে যদি শৃঙ্খলা ফিরে না আসে তাহলে কোন অবস্থাতেই সড়ক নিরাপদ হবে না।
তার প্রকৃত উদাহরণ, এই করোনায় খালি সড়কে যে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের চূড়ান্ত প্রত্যাশা, দুর্ঘটনা মুক্ত সড়ক- নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা। যতদিন এটি পূরণ না হবে ততদিন নিসচা'র কর্মীরা সড়কে আছে এবং থাকবে। নতুন আইনে কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শঙ্কা অমূলক। যারা অন্যায় করবেন তাদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। পরিবহন মালিক হোক ও শ্রমিক হোক কারো চাপের মুখে নতি স্বীকার করা যাবে না। আইনের বাস্তবায়ন আটকে রাখা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে সরকারকে বিব্রত করে কেউ যদি এই আইনের বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই এখন আমাদের দাবি এবং সরকারের কাছে নিসচা জোর দাবি জানাচ্ছে আগামী ১ জানুয়ারি ২০২১ সাল হতে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পূর্ণ বাস্তবায়ন যেন করা হয়। এরপর যেন আর কোন সময় বৃদ্ধি না করা হয়।
সান নিউজ/এক/এনকে