এনামুল কবীর, সিলেট : নিশারুলে আশাবাদী সিলেটের বিক্ষুব্ধ মানুষ। রায়হান হত্যাকান্ডের প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিস্কৃত এসআই, পলাতক আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে হাতকড়া পরিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
বিশেষ করে রায়হানের বাড়িতে গিয়ে তার মা-স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সান্তনা দেয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার নিশারুল আরিফ যেসব কথা বলেছেন, তা জেনে ও শুনে রায়হানের পরিবারের সদস্য ও আন্দোলনরত সিলেটবাসী আকবর ভুঁইয়া গ্রেপ্তারের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী বলেই জানালেন কয়েকজন সচেতন নাগরিক।
১১ অক্টোবর পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু ও ১২ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির বহিস্কৃত ইনচার্জ আকবর হোসেন ভুঁইয়ার লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রায়হানের শোকে কাতর সিলেটবাসীর মনে আগুন ছড়িয়ে দেয়। ছাত্র-ছাত্রী, সমাজকর্মী, সচেতন নাগরিক বৃন্দ, এমনকি সিলেট জেলা ও মহানগরের ব্যবসায়ীরা সিলেট ব্যবসায়ী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে নেমে আসেন রাস্তায়। প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন। ইতিপূর্বে সড়ক অবরোধ, মানবন্ধন থেকে ২ দফা পুলিশের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও বড়কোন অঘটন ঘটেনি, তবে মানুষের রাগ ও অসন্তোষের প্রকাশ ঘটেছে এসবের প্রেক্ষিতে। এত কিছুর পরেও আকবরের টিকিটির নাগাল পায়নি প্রশাসন।
এদিকে রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিহস্কৃত পুলিশের ৪ সদস্যের মধ্যে ২ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। ২৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন যার খবরের ভিত্তিতে রায়হানকে আটক করা হয়েছিল, সেই সাইদুর রহমানও।
এদিকে রায়হান হত্যাকন্ডের প্রধান অভিযুক্ত বহিস্কৃত আকবর ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান। এতে তার পরিবারসহ সিলেটবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম চলতেই থাকে।
গত ২২ অক্টোবর এসএমপির পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। তার জায়গায় নতুন দায়িত্ব দেয়া হয় এসপিবিএন’র উর্ধ্বতন কমকর্তা নিশারুল আরিফকে। মঙ্গলবার সিলেটে পৌঁছান তিনি।
নতুন কর্মস্থলে যোগ দিয়েই এসএমপি কমিশনার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রায়হানের আখালিয়া নেহারীপাড়ার বাসায় গিয়েছিলেন তার মা ও স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে। সেখানে তাদের তিনি শান্তনা দেন এবং আকবরসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন বারবার। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালেও ঘটনাটিকে পুলিশসহ সবার জন্য লজ্জার বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আকবরকে গ্রেপ্তার এবং তাকে পালাতে সহায়তাকারী নেপথ্যের বড়কর্তাদেরও প্রমাণসাপেক্ষে আইনের আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন।
রায়হানের মা ও পরিবারের সদস্যরা গত রোববার যেখানে রায়হানকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই অভিশপ্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে অনশনে বসেছিলেন। ৬ ঘন্টা পর সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী তাদের অনশন ভাঙান। এর আগে তারা সংবাদ সম্মেলন করেও অপরাধিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিলেন।
কিন্তু তবু আকবর ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে কিছুটা হতাশা গ্রাস করছিল আন্দোলনকারীদের। এমনকি রায়হানের পরিবারের সদস্যদেরও। তবে নবনিযুক্ত এসএমপি কমিশনারের বক্তব্যে তারা নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন। তাদের প্রত্যাশা, এবার কিছু একটা হতে পারে। আখালিয়া নেহারীপাড়ার যুবক আমিনুল, হানিফ, কালাম এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তেমন প্রত্যাশাই ব্যাক্ত করেছেন।
আন্দোলন প্রক্রিয়ায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অন্যতম সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান। বুধবার রাতে যখন পুলিশ কমিশনার রায়হানের পরিবারের সদস্যদর সাথে কথা বলেন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনিও। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালেও তিনি ছিলেন।
জানালেন, কমিশনারের কথাবার্তা ও ঘোষণায় মনে হচ্ছে এবার কিছু একটা হবে। তার কথায় আমরা যথেষ্ঠ আশাবাদী। তিনি যেকোন সময় তার অফিসে গেলে এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য শুনতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছন। আমরা ২/১ দিনের মধ্যে তার সাথে কথা বলব। এরপর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রায়হানের স্নেহময়ী জননী, স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী বলেই জানালেন কাউন্সিলর কামরান।
সান নিউজ/এক/এস