সারাদেশ

শারীরিক সম্পর্কের পরই মারা গেল নূর নাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : বাল্যবিয়ের বলি হলো অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নূর নাহার (১৪)। অভাব ঘোচাতে আর কিশোরীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় পড়ার টেবিল থেকে তুলে বসানো হয় বিয়ের পিঁড়িতে। মাস খানেক আগেই লাল শাড়ি আর মেহেদী পরে কনের সাজে শ্বশুরবাড়িতে যায় নূর নাহার। কিন্তু মাত্র ৩৪ দিনের মাথায় জীবনের ইতি টানতে হলো তাকে।

নিহত নূর নাহারের স্বামীর বাড়ির পক্ষ থেকে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসার প্রস্তাব দেয়া হলেও আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিচার না হলে বাল্যবিয়ের বলি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নূর নাহারের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না বলে দাবি সচেতন মহলের।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নূর নাহারের বাবা সখীপুর উপজেলার নলুয়া কলাবাগান গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি রিকশাচালক। আর মা গার্মেন্টসকর্মী। অভাবের সংসারে তার দিনমজুর নানা উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল খান চার বছর বয়সে নূর নাহারকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে স্কুলে ভর্তি করান। নূরনাহার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

গত ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ৩৪ বছর বয়সী ছেলে প্রবাস ফেরত রাজিব খানের সঙ্গে বিয়ে হয় নূর নাহারের। বিয়ের সময় নানা লাল খানের প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই টাকার জোগান দেন তার আত্মীয়-স্বজনরা।

তবে মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়নি। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের পরই নূর নাহারের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নূরনাহার ও রাজিবের পরিবারে আলোচনা হয়।

পরে রাজিবের পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম্য করিবাজ দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। এতেও ফল না পাওয়ায় গত ২২ অক্টোবর নূর নাহারকে ভর্তি করা হয় টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে।

ওই ক্লিনিকে নূর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বামী রাজিব ও তার পরিবার কৌশলে কেটে পড়ে। পরে অবস্থার অবনতি হলে নূরনাহারের পরিবার তাকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ সময় মেয়েটির চিকিৎসা করানোর মতো টাকাও ছিল না গরিব পরিবারটির হাতে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় গ্রামবাসী প্রায় ৬০ হাজার তুলে দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নূর নাহারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার।

কিশোরী নববধূর এমন দুঃসময়েও শ্বশুরবাড়ির কোনো লোকই ছিলোনা পাশে। অবশেষে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে মৃত্যু হয় তার। পরদিন রোববার (২৫ অক্টোবর) ময়নাতদন্ত শেষে তাকে তার নানার বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

নূর নাহারের নানা লাল খান বলেন, মেয়ের জামাইয়ের অভাবের কারণে নাতনি নূর নাহারকে ছোটকালেই আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। দিনমজুরি করেও তাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম। ছেলে প্রবাসী ও ধনী হওয়ায় মেয়েটির সুখের কথা ভেবে আমরা নূর নাহারকে বিয়ে দিই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে আর বাঁচাতেই পারলাম না।

মৃত্যুর পর নূর নাহারের স্বামী রাজিব তার লাশটি পর্যন্ত দেখতে আসেননি। মূলত স্বামীর কারণেই আমার নাতনির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

অপরদিকে নূর নাহারের স্বামী রাজিব খান, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ বাড়ির লোকদের দাবি, আগে থেকেই মেয়েটির জরায়ুতে টিউমার ছিল। মেয়ের অসুস্থতা গোপন করে বিয়ে দিয়েছে তার নানা। তারপরও আমরা চিকিৎসায় কোনো কৃপণতা করিনি।

তারা জানান, ক্লিনিকের ডাক্তার যখন ঢাকায় রেফার্ড করেন তখন নূর নাহারের পরিবারকে জানানো হয়। তারা এসে ঢাকায় নিয়ে যায়। পরে ঢাকাতে যেতে চাইলে তারা নিষেধ করে। পরে মৃত্যুর সংবাদ শুনে গেলে ওই বাড়ির লোকজন আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেন।

এমনকি রাজিবকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি জানালে তিনি আমাদের বাড়িতে চলে আসতে বলেন। তাই আমরা বাড়িতে চলে আসি।

কাউলজানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, স্বামীর পরিবারের লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করেন মৃত নূর নাহারের বাড়িতে তাদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। পরিবেশ অস্বাভাবিক না হওয়ায় আমি তাদের ওই বাড়িতে যেতে বারণ করি। এছাড়াও তাদের মারধর করা হয়েছিল বলে শুনেছেন তিনি।

কলিয়া সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিতই শিক্ষার্থীদের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকি। হঠাৎ করেই গোপনে নূর নাহারকে তার পরিবার বিয়ে দিয়ে দেয়। নুরনাহার মেধাবী ছাত্রী ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে তার রোল নম্বর ছিল ২। তার মৃত্যু সংবাদ খুবই কষ্টদায়ক। আর কোনো নূর নাহার যেন বাল্যবিয়ের বলি না হয়।

নূর নাহারের মামা লুৎফর খান বলেন, বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু আইন দিয়ে নয়, সামাজিকভাবে বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে। সূত্র : জাগো নিউজ।

সান নিউজ/এসএম

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

টিভিতে আজকের খেলা

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রতিদিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ব...

জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে শিল্পকলায় ভাস্কর্য কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভা...

নিখোঁজের পর খালে মিলল বেদের মরদেহ

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিখোঁজের ১০ দিন পর...

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জরুরি নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের...

রিমান্ড শেষে কারাগারে আতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বকুল মিয়া নাম...

ধাপে ধাপে নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। সরকার এখন ধা...

শরীয়তপুরে বিএনপি'র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪...

ঢাকা-বেনাপোল রেল যাত্রা ২ ডিসেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-যশোর-খুলনা-বেনাপোল সে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা