নিজস্ব প্রতিনিধি, রংপুর : ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে না পাওয়ায় স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করে বাসা থেকে ৪ বছরের কন্যা সন্তানসহ বের দেয়া ও ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হবার ঘটনায় দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুনের জামিন না মজ্ঞুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের রংপুরের চীফ জুডিশয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শওকত আলী এ আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রংপুর নগরীর ধাপ কাকলী লেনের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মামুনের সাথে ১১ বছর আগে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগজ্ঞ উপজেলার পান্থপাড়া গ্রামের মনসুর আলী মন্ডলের কন্যা রুপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাফরুহা আখতারের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাবার বাড়ি রংপুর নগরীর ধাপ কাকলী লেনের বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। ১১ বছর সংসার জীবনে ৭ বছর পর তাদের এক কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহন করে। তার বর্তমান বয়স ৪ বছর। মামলার বাদিনী অভিযোগ করেন তার স্বামী ঠুনকো ঘটনায় তাকে মারধর করতো। এক পর্যায়ে তার স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর কার্যালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি সহ ভাইরাল হলে ব্যাংকে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে প্রায়শই তাকে মারধর করতো স্বামী মামুন। অবশেষে পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন উর্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে মামুন ওয়াদা করে সে আর পরকীয়ায় লিপ্ত হবেনা এবং স্ত্রীকে নির্যাতন করবেনা। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আবারো ওই নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। এ সব ঘটনার ছবি এবং তাদের মোবাইলে দেয়া শত শত ম্যাসেজ ও অডিও প্রকাশ পেলে ঘটনার প্রতিবাদ করলে আসামী মামুন আবারো তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে।
শুধু তাই নয় ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে ওই টাকা তাদের বাসার তৃতীয় তলা নির্মান করা হবে। টাকা দিতে অস্বিকৃতি জ্ঞাপন করায় চলতি বছরের ২১ মে তারিখে বেদম মারধর করে গলা টিপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয় গভীর রাতে ৪ বছরের কন্যা সন্তান সহ বাসা থেকে বের করে দেয়। গুরতর অসুস্থ অবস্থায় গোবিন্দগজ্ঞে বাসায় এসে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে চলতি বছরের ১ জুলাই তারিখে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশের কোতয়ালী থানায় মাফরুহা আখতার নিজেই বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। যার নম্বর ৩ তারিখ ১/০৭/২০ইং।
মামলা দায়ের করার পর বাদিকে বিভিন্ন ভাবে প্রান নাশের হুমকি দিতে থাকে আসামী মামুন। ফলে জীবনের নিরাপত্তাহীনতার আশংকায় রুপালী ব্যাংক রংপুর সেন্ট্রাল রোড শাখা থেকে বগুড়া শাখায় বদলী নিয়ে সেখানে চাকুরী করছেন বাদী।
এদিকে এ ঘটনার দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আসামী মামুনুর রহমান হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মজ্ঞুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বাদী পক্ষের আইনজিবী পিপি আব্দুল মালেক এ্যাডভোকেট ও রইছ উদ্দিন বাদশা এ্যাডভোকেট জানান, আসামী তার স্ত্রীর প্রতি যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তার ভিডিও চিত্র সে নিজেই ধারন করে রেখেছে তার পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়া প্রেমিকাকে দেখানোর জন্য এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল ছবি প্রেমিকার কাছে দেয়া শত শত ম্যাসেজ ও অন্যান্য কাগজ পত্র প্রমান করে আসামী একজন নারী নির্যাতনকারী বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মজ্ঞুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
সান নিউজ/পিডিকে/এস