নিজস্ব প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের উলিপুরে নিম্নচাপের প্রভাবে দুই দিনের বৃষ্টি ও দমকা ঝড়ো-বাতাসে চলতি রোপা আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কয়েকশ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত বাতাসে ধুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যাওয়ায় তা পঁচে যাওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা। এ পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক তাদের ফসল কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ২৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষাবাদ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। পাঁচ দফা বন্যার কারণে ৪০৮ হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত ও শাক-সবজি, মাসকালাই ক্ষেত ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিন সহস্রাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলাতেও এর প্রভাবে বৃষ্টিসহ ঝড়ো বাতাসের রোপা আমন ক্ষেত মাটিতে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। ফলে উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক তাদের আমন ক্ষেত নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন।
বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠে রোপা আমনের বাম্পার ফলনের আশা করলেও বিভিন্ন পোকা-মাকড় আর ইঁদুরের আক্রমনে কিছুটা বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। কিন্তু নিম্নচাপের প্রভাবে গত দুইদিনের বৃষ্টি আর বাতাসে উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের ক্ষেতের ধান গাছ দুমড়ে-মুচড়ে মাটিতে নুইয়ে পড়েছে।
কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে কৃষকরা জমির ধানগাছ গাঁছা বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অনেক কৃষক নুইয়ে পড়া ধান গাছ নষ্ট হওয়ার আশংকায় তা কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হাই জানান, বৃষ্টি ও বাতাসে ধান গাছ পানির মধ্যে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় বেশি দিন পানির মধ্যে থাকলে তা পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের কৃষাণী আহিমা বেগম জানান,‘ মোর এ্যলা কি হইবে বাবা, মোর তো খালি ২০ শতক জমি, সেখন্যাও বাতাসোত পানিত পড়ি গেইছে। কি আর করমো, এ্যলা কাটি নিয়া যায়া গরুক খাওয়াং।’
ওই এলাকার আমজাদ হোসেন, শশি মোহন, হাতিয়া ভবেশ গ্রামের আকবর আলী,করিম উদ্দিনসহ অনেকে জানান, ধানের শীষ বের হবার সময় হয়েছে, এ অবস্থায় পানিতে পড়ে থাকলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই বাজারে গো-খাদ্যের মূল্য অনেক বেশি, তাই নষ্ট হওয়ার আগেই বাধ্য হয়ে ধান গাছ কেটে গবাদি পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মাটিতে পড়ে যাওয়া ধান গাছ গাঁছা বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরির জন্য মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কাজ করছেন।
সান নিউজ/এনকে/এস