নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাংচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ফাতেমা শরীফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে সিটিপার্ক নতুন চরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ। আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে ঝালকাঠি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল বাদি হয়ে গত রোববার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, যুবমহিলা লীগ কর্মী ফতেমা শরীফসহ ১৭ জনের নামে দ্রæত বিচার আইনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত রোববার একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং ২৬৪/২০)। বিচারক এ.এইচ.এম ইমরানুর রহমান থানার ওসি হিসেবে আমাকে বাদির অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় আদালতের আদেশ হাতে পেয়ে দ্রæত বিচার আইনের সংশ্লিস্ট ধারায় মামলা রেকর্ড হয়।
ঝালকাঠি থানার মামলা নং ১৩ তারিখ ২১-১০-২০২০। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী এজাহার ভুক্ত ৩নং আসামী ফতেমা শরীফকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলায় প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল অভিযোগ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তরপূর্ব কর্নারে রাস্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরনে পাঁচলাখ টাকা ব্যায়ে একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছিল। গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া শারমীন মৌসুমি কেকা, আনিসুর রহমান তাপু ও ফতেমা শরীফের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরও ১২/১৪ জন ব্যাক্তি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেরা খেলার মাঠের গেটের তালা ভেঙ্গে অবৈধভাবে স্কুলের কম্পাউন্ডে প্রবেশ শহীদ মিনার ভেঙ্গে মাটির সাথে গুড়িয়ে। স্থানীয় কিছু লোকজন ও কয়েকজন অভিভাবক শহীদ মিনার ভাঙ্গার কারণ জানতে চাইলে ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ১ ও ২ নং আসামী পিস্তল ও ৩নং আসামী দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সকলকে সরে যেতে বাধ্য করে।
রীতা মন্ডলের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার একটি গুরত্বপূর্ন স্থাবর সম্পত্তি । আসামীরা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতীক শহীদ মিনার ভাংচুর করিয়া মারাত্মক অপরাধ সংগঠন করিয়াছে যাহা দ্রুত বিচার আইনে বিচারযোগ্য।
এসআই হযরত আলী বলেন, আসামী ফতেমা শরীফকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রয়োজনে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য ঝালকাঠি নতুন চর এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান মোঃ নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ফতেমা শরীফ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকার ক্যাডার হিসেবে নানা অপকর্ম করে আসছিল। বিতর্কিত নারী হিসেবে দলের বড় বড় নেতাদের অপমান অপদস্ত এবং হেনস্তা করতো। মানসম্মানের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না। শারমীন মৌসুমি কেকার প্রভাব কাজে লাগিয়ে এক সময়ের হতদরীদ্র রিকসা চালকের মেয়ে বনেযান লাখলাখ টাকার মালিক। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় সরকার তথা ঝালকাঠি সদর আসনের সংসদ সদস্য সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য ত্রান বিতরনে অনিয়মের মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে শারমীন মৌসুমি কেকা ও ফাতেমা শরীফ তার দলবল।
গত ৩০ আগস্ট শহরের পূর্বচাদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খানের দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন আক্তারকে শারীরিক নির্যাতন করে মাথার চুল কেটে দেয় কেকা ও ফতেমা বাহিনী। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা হলেও হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন লাভ করে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ফাতেমা শরীফ। কিন্তু শহীদ মিনার ভাংচুরের মামলায় পুলিশের খাচাঁয় আটকা পড়ে ফতেমা শরীফ।
সান নিউজ/আরকে/এস