নিজস্ব প্রতিনিধি, রাজশাহী : রাজশাহী নগরীর বিলশিমলা বন্ধ গেট এলাকায় রেললাইনে মাথা দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এমরুল হাসান (৪০) নামে এক যুবক। নিহত যুবকের পকেট থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। যেখানে লেখাছিল হাত-পা ভেঙে দিয়ে জমি দখল করায় আত্মহত্যা করেন তিনি।
নিহত এমরুলের বাবার নাম ফিটু মিয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর এলাকায় তার বাড়ি। জমি বিরোধে নির্যাতনের পর এমরুল পঙ্গু জীবন কাটাতেন। রাজশাহীতে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য।
চিরকুটে এমরুল লিখেছেন– ‘জালাল, কালাম ও তাদের ছেলে রানারা মিলে অন্যায়ভাবে মেরে আমার হাত-পা ভেঙে দিয়ে জমি কেড়ে নিয়েছে। এই কষ্টে আমি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলাম। আমার হাত ও পা ভাঙার পরও আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দুবার বন্ধ করে দেয় তারা।' এই চিরকুটে তিনি উল্লেখ করেছেন– কে তার কাছে কত টাকা পাবে। এসব ঋণ যেন স্ত্রী শোধ করে দেন।
মৃত্যুর পর কোন মোবাইল নম্বরে ফোন করে খবর দেয়া যাবে সে কথাও চিরকুটে লেখা আছে। তার মরদেহ কোন কবরস্থানে দাফন করা হবে সেটিও এমরুল লিখে গেছেন।
আরেকটি চিরকুটে এমরুল লিখেছেন– ‘আমার জীবনে আমার আপনজন আমার বেটি (মেয়ে) ও স্ত্রী। এ ছাড়া আমার প্রিয়জন আর কেউ নেই। এ জীবন আমার আর ভালো লাগছে না। আমার লেখা কাগজ দুটা আমার স্ত্রীকে দেবেন। কাগজের ফটোকপি পুলিশকে দেবেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিলশিমলা এলাকা দিয়ে এমরুল ক্র্যাচে ভর দিয়ে রেললাইনের পাশ ধরে হাঁটছিলেন। ওই সময় রাজশাহী থেকে রহনপুরগামী একটি কমিউটার ট্রেন আসে। ট্রেনটি খুব কাছে এলেই এমরুল রেললাইনে মাথা পেতে দেন। এতে তার মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। রেললাইনের পাশে পড়ে থাকে এমরুলের নিথর দেহ আর তার একমাত্র বাহন ক্র্যাচ।
নিহত এমরুলের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, গত সোমবার স্বামীর চিকিৎসার জন্য তারা রাজশাহী এসেছিলেন। নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় তারা তার বোনের বাড়িতে ওঠেন। সকালে এমরুল তাকে জানান তিনি বাইরে যাচ্ছেন। এর পর তিনি রেললাইনে মাথা পেতে আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ চিরকুটে থাকা তার বোনের নম্বরে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করে।
আয়েশা জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে জালাল ও কালামরা তাদের জমি দখল করে বাড়ি করেছেন। এমরুল বাধা দিতে গেলে পিটিয়ে তার হাত ও পা ভেঙে দেয়া হয়। বহু চিকিৎসার পর তার স্বামীকে ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলতে হতো।
জমিদখলের বিষয়ে মামলা করলেও আসামিরা বাইরেই থেকেছে। হাত-পা ভাঙার কারণে চলাচল করতে পারতেন না। সে কারণে জমিও উদ্ধার করতে পারেননি। ক্ষোভে তার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন।
নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান জানান, রেলওয়ে থানা পুলিশ নিহত এমরুলের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। মরহেদ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজশাহী জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
সান নিউজ/এম/এস