নিজস্ব প্রতিনিধি, খুলনা : খুলনায় গ্রেফতার হওয়া পাটকল শ্রমিক ও বাম জোটের ১৪ জনের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে খানজাহান আলী থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় আরো অজ্ঞাত ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামী করা হয়।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে গ্রেফতার হওয়া পাটকল শ্রমিক ও বাম জোটের নেতাদের আদালতে হাজির করা হয়।
এরা হলেন, জনার্দন দত্ত (৪৫), মো. মোজাম্মেল হোসেন খান (৫৫), অলিয়ার রহমান (৪৮), এমএ রশিদ (৫৮), মো. মিজানুর রহমান বাবু, মো. রবিউল ইসলাম (৩৫), শেখ রবিউল ইসলাম রবি (২৬), মো. শমসের আলম (৩৯), মো. আলামিন শেখ (২৬), নওশের আলী (৫০), মো. ফারুক হোসেন(৩৫), মো. জাহাঙ্গীর সরদার (৫০), মো. সহিদুল ইসলাম (৫০), মো. আবুল হোসেন (৫০)। এর মধ্যে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন খানকে পলাতক দেখানো হয়েছে। বাকী ১৩ জন গ্রেপ্তার।
এর আগে সোমবার দুপুরে খুলনা-যশোর মহাসড়কে ইস্টার্ন গেট এলাকায় অবরোধ কর্মসূচি থেকে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদাসহ আটক করা হলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু ও পাটকলে আধুনিকায়নসহ ১৪ দফা দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমর্থনে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ সোমবার খুলনা-যশোর মহাসড়কে ইস্টার্ন গেট এলাকায় অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়।
সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহবায়ক কুদরত-ই খুদা বলেন, দাবি আদায়ে ইস্টার্ন মিল গেটে শান্তিপূর্ণ অবরোধ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। তাদেরকে ১৫ মিনিটের জন্য হলেও কর্মসূচি পালন করতে দিতে অনুরোধ করলেও তারা শোনেনি। বরং সে খান থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ইট পাটকলে নিক্ষেপ, পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সিপিবি জেলা সদস্য মন্ডলির সদস্য সুতপা বেদজ্ঞ জানান, সিপিবি নেতা এসএ রশীদ, মিজানুর রহমান বাবু, বাসদ নেতা জনার্দন দত্ত নান্টু, শ্রমিক নেতা অলিয়ার রহমানসহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আদালতে তাদের জামিনের আবেদন জানানো হচ্ছে।
অপরদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এতে বলা হয় সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০ টা হতে দুপুর ১ টা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ণ ও আলিম জুট মিলের মধ্যবর্তী স্থলে খুলনা-যশোর মহাসড়কের উপর পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে ১৪ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে খুলনা পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের ৩০০/৩৫০ জন শ্রমিকের উপস্থিতিতে পূর্ব ঘোষিত রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচী পালনের উদ্দেশ্যে খুলনা-যশোর মহাসড়কে সমবেত হয়ে এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা খুলনা হতে ফরিদপুর গামী যাত্রীবাহী পরিবহণ ফেম নামক একটি চলন্ত বাসের বাম পাশের সামনের গ্লাস পাথর মেরে ভাংচুর করে এবং শ্রমিকরা বিভিন্ন দিক হতে খুলনা-যশোর মহাসড়কে চলমান যানবাহন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও রেল লাইনের পাথর মারতে থাকে। এ সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ০৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জানমাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে পুলিশ ০৭ রাউন্ড টিয়ার শেল এবং ০২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে উত্তেজিত অবৈধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আহত পুলিশ অফিসার ও ফোর্সকে তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৯ অক্টোবর) খুলনায় সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে পাটকল শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। রাতে খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সান নিউজ/কেএ/এস