রাজবাড়ি প্রতিনিধি:
যৌনকর্মীরা যেন মানুষ নয়। তাদের নেই কোন মৌলিক অধিকার। ধর্মীয় রীতিনীতিও যেন তাদের জন্য নিষিদ্ধ। দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীতে এতো দিন কোন যৌনকর্মীর মৃত্যু হলে পদ্মা নদীতে লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হতো। পরে পল্লীর পাশে একটি গোরস্থান হলেও সেখানে জানাযার নামাজ ও কাফনের কাপড় ছাড়াই রাতের অন্ধকারে যৌনকর্মীর মৃতদেহ মাটি চাপা দেওয়া হতো। কিন্তু এই রীতিনীতি কারা তৈরি করলো? ধর্মের কোথাও কি লেখা আছে এমন বিধান?
এমন হাজারও প্রশ্ন ছিল দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের। তবে দীর্ঘদিনের অমানবিক প্রথা ভেঙে যৌনকর্মীদেরকে মানুষের মর্যাদা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে সাহস করে এগিয়ে আসেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশিকুর রহমান। গত ২ ফেব্রুয়ারি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর একজন ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা প্রাক্তন যৌনকর্মী হামিদা বেগমের মৃত্যু হয়। পরে যৌনপল্লীটির মৃত কর্মীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো হামিদার জানাজার নামাজ ও দাফন কাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন আশিকুর রহমান। ঐ দিন রাত ৯টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর দ্বিতীয়বারের মতো রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতীতাপল্লীর যৌনকর্মী রিনা বেগম (৫৫) মরদেহ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হল।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া পতীতাপল্লীর পাশে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পল্লীর নির্দিষ্ট কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান পিপিএম বারের উদ্যোগে গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাজার নামাজ পড়ান।
বৃহস্পতিবার বিকালে রিনা বেগম নামের এক যৌনকর্মীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের দৃষ্টিতে আসে এবং তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ওই যৌনকর্মীর জানাজা নামাজের উদ্দ্যোগ নেন। কিন্তু যৌনকর্মী বলে স্থানীয় কোনো ইমাম তার জানাজা পড়াতে রাজি হননি। তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে জানাজার নামাজ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম, বার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান, দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডলসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
হামিদা বেগমের জানাযা নামাজের পর স্থানীয় ও দেশি-বিদেশি মিডিয়া ফলাওকরে বিষয়টি তুলে ধরে এবং এই ধারা অব্যাহত থাকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন জাগে। দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার মাধ্যমে সে সংশয় অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষকৃত্য হওয়ার যে সুযোগ সামাজিক কারণে সেটি যদি না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই আলোকে প্রথম কোনো যৌনকর্মীর জানাজা শেষে আজ দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
যৌনকর্মীদের একটি দলের প্রধান ঝুমুর বেগম বলেন, ‘আগে আমাদের কেউ মারা গেলে সকালে মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য আমরা যদি তার মৃতদেহ ঘর থেকে বের করতাম স্থানীয়রা বাঁশ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের তাড়া করত।’