নিজস্ব প্রতিনিধি, যশোর : বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক শুল্কায়ন ও পন্য পরীক্ষণে নানা বিধ হয়রানির প্রতিবাদে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশন। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরকার।
স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোল কাস্টমসে কোন কাজ করার পরিবেশ নেই। শুল্কায়ন গ্রুপের সুপারেনটেনডেন্ট মনে যা খুশি তাই করতে চাই। আমদানিকৃত পণ্যের একটি ফাইল গ্রুপে নিয়ে গেলে তারা ইচ্ছামত এইচএস কোড পরিবর্তন করে এবং ভ্যালু পরিবর্তন করতে চাই। তারা পূর্বের কোন এইচএস কোড বা পূর্বের কোন রেফারেন্স মূল্য ,ডাটাশিট মূল্য মানতে চায় না। তারা জোর করে ১০% এর মাল ২৫ পার্সেন্ট এ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ ধরনের সমস্যা গুলো বেশি হচ্ছ বেনাপোল কাস্টমস এর ৩ নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপ এবং ৪ নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপে। এই দুই গ্রুপে কর্মরত দুই কাস্টমস অফিসারা এ ধরনের কাজ করে থাকেন। এসব গ্রুপে একের অধিক স্টাফরা ফাইল নিয়ে গেলে তাদেরকে অনেক সময় তাড়িয়ে বের করে দেয়া হয়। এসব নানাবিধ হয়রানীর কারণে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে ৩ নম্বর গ্রুপ এবং ৪ নম্বর শুল্কায়ন গ্রুপের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বেনাপোল কাস্টমস এর একটি পরীক্ষার গ্রুপ ইনভেস্টিগেশন রিসার্চ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (আইআরএম) কর্তৃক পণ্য পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমদানিকৃত একই পণ্য এখন ৩ বার পরীক্ষণ করতে হচ্ছে। একবার ইন্সপেক্টর মাল পরীক্ষণ করে আসার পর সে পন্য আবার সুপারেনটেনডেন্ট পরীক্ষণ করতে যাচ্ছেন। এরপর রাতে ডেপুটি কমিশনার আবারও সেই একই মাল পরীক্ষণ করছেন। তিনবার আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষণ করার কারণে তিনবার লেবার খরচ দিতে হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
একই পন্য বারবার পরীক্ষণ করার কারণে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক দিন।একটি পণ্য পরীক্ষণ করে তার রিপোর্ট নিতে এখন সময় লাগছে ৭ থেকে ১০ দিন । অনেক সময় ১৫ দিনও সময় লেগে যাচ্ছে । এসব হয়রানির প্রতিবাদে আমাদের কোন স্টাফ বেনাপোল কাস্টমস হাউসে কাজ করতে চাচ্ছে না। তাছাড়া আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে কাজ করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এসব হয়রানীর প্রতিবাদে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষণ সহ শুল্কায়নের কাজ আমরা বন্ধ রেখেছি।
বেনাপোলে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা কাস্টমস অফিসার কর্তৃক পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছি। এর একটা সুরাহা হওয়া উচিত। কাস্টমস অফিসারা মনে যা করবে সবকিছু মেনে নেয়া যায়না। তারা ইচ্ছামত শুল্কায়নে কাজ করছেন । তারা কোনো এইচএস কোড ও রেফারেন্স বা ডাটাশিট মূল্য মানতে চান না।কাস্টমসের আইনে বলে ডাটা শিটে সর্ব নিম্ন মূল্যে আমদানিকৃত পণ্য অ্যাসেসমেন্ট করার কথা থাকলেও কাস্টমস অফিসারা সেটা মানেন না। তারা সব সময় উচ্চতর মূল্যে শুল্কায়ন করতে চাই।
বাংলাদেশের সকল কাস্টমস হাউসে ডাটাশিট মূল্য মানলেও ব্যতিক্রম শুধু বেনাপোল কাস্টমস হাউসে। বেনাপোলে মিনিমাম মূল্য , ডাটাশিট মূল্য বা রেফারেন্স মূল্য মানা হয়না। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা রাজস্ব টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে ইচ্ছামত পন্যের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করেন। ইচ্ছামত আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করায় আমদানিকারকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এসব হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি ছেড়ে দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, বেনাপোল কাস্টমসে হয়রানির কোন শেষ নাই। মাল ঢুকা থেকে শুরু করে পরীক্ষণ ও শুল্কায়নে নানাবিধ ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আমদানিকৃত একই পণ্য ৩ বার পরীক্ষণ করতে হচ্ছে। পরীক্ষণ করে রিপোর্ট নিতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ দিন । এরপর শুরু হয় শুল্কায়নে বিরম্বনা। শুল্কায়নে মানা হচ্ছে না পূর্বের কোন রেফারেন্স। এখানে মানা হয়না কোন রেফারেন্স মূল্য বা ডাটাশিট মূল্য। কাস্টমস অফিসার রা তার নিজেদের খেয়ালখুশি মতো মূল্য নির্ধারণ করে অ্যাসেসমেন্ট করার চেষ্টা করেন।
এসব নানা বিধ হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছেন। তাই বেনাপোলে ব্যবসায়ীরা কাস্টমস কর্তৃক নানাবিধ ও হয়রানির প্রতিবাদে পরীক্ষন সহ বেনাপোল কাস্টমস এর কয়েকটি গ্রুপে শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। শুল্কায়ন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সরকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাস্টমস অফিসার কর্তৃক এসব হয়রানি মূলক কার্যক্রম বন্ধ না হলে আগামীতে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।