নিজস্ব প্রতিনিধি, বরিশাল : ব্রিটিশ ও পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনের নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা’র (কুমুদা) স্মৃতি স্থম্ভ ও সমাধি ভেঙে ফেলেছে স্থানীয় প্রশাসন। সড়ক প্রশস্তের নাম করে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় এই মহান মানুষটির জন্মভিটার স্মৃতি স্তম্ভ ভেঙে ফেলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে স্মৃতি স্তম্ভ ভাঙা হয়নি বলে দাবী করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ। তিনি বলেছেন, সড়ক প্রশস্ত করতে গিয়ে শ্রমিকরা ভুলবশত ওই অংশের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে। আমরা বিষয়টি দেখেছি, শ্রমিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আশ্বস্ত করে বলেন, যে অংশ ভেঙেছে সেখানে পুনরায় নির্মাণ করাতো হবেই, পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধণে উপরে একটি শেড তৈরী করা হবে। এজন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
যদিও স্থানীয়রা বলছেন, রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের দেয়াল ভেঙে ফেলায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুনঃনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। বাস্তবে কতটুকু হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
বানারীপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি বেনি লাল দাস জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বাউন্ডারি ভেঙে ফেলা হয়। মঙ্গলবার বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা’র স্মৃতি স্থাপনা ও সমাধি ভেঙে ফেলতে আমি দেখেছি। স্থানীয় সমস্যার কারনে তিনি আর কোন কথা বলতে রাজি হননি।
আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণরুপে প্রতিহিংসার বর্শবর্তী হয়ে একজন প্রভাবশালীর মদদে বির্তকিত ওই অভিযান চালানো হয়েছে। রাষ্ট্র যেখানে ঐতিহাসিক মানুষদের স্মৃতি সংরক্ষণে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন অভিযান বা সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বিপ্লবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা’র বাড়ির স্থাপনা ভেঙে ফেলা দূরভীসন্ধির অংশ।
প্রসঙ্গত, ১৯০৪ সালের ৮ ডিসেম্বর বানারীপাড়ায় নিজ পিত্রালয়ে তমাল তলায় জন্ম গ্রহন করেন বিল্পবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা। তার পিতা ছিলেন শরৎ গুহ ঠাকুরতা ও মাতা ছিলেন ভুবন মহীনি দেবী। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কুমুদা ছিলেন সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ বার করান্তরিন হয়েছেন। আন্দোলন করতে গিয়ে বিয়ে করা হয়নি তার। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত দেশ (অর্থাৎ বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ) স্বাধীন না হবে ততদিনে তিনি বিয়ে করবেন না।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু ওই সময়ে বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় আর বিয়ে করা হয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার পরিবার পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু তিনি দেশ মাতৃকার টানে পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যান। দেশে থেকে যাওয়ার সুবাদে পাকিস্তানের অত্যাচার শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা সরব থাকতেন। তিনি পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন করায় তাকে ৮ বার এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ১৭ বারসহ মোট ২৫ বার কারাগারে পাঠানো হয়। দুটো স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করা বিল্পবী কুমুদ বিহারী গুহ ঠাকুরতা বানারীপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।আর তার কোন বংশধর না থাকায় জন্মবাড়িটাই স্মুতিচিহ্ন।
সান নিউজ/বিএম/এস