নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ : অসময়ে ঝুলছে গোপালগঞ্জের হর্টিকালচার সেন্টারে বড় বড় রসালো পাঁকা আম। মেহেদী-২ নামের এই আমটি উজ্জল হলুদ রং এর। এটি ৫০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া এখানের গাছ ভর্তি থাই নারিকেল, কাদি কাদি ডাব, ড্রাগন ফল, ডুমুর, মাল্টা, লেবু, কলা ও কমলালেবুসহ দেশি-বিদেশি ফলের সমাহার। রয়েছে অসংখ্য ওষুধি গাছ ও ফুলের সমাহার। দেখার সাথে সাথে যে কারো মন ভরে যাবে। বলছি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামে অবস্থিত সরকারি হর্টিকালচার সেন্টারের কথা।
২০১৪ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামে ১৬ একর ৬২শতাংশ জমির উপর বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ হর্টিকালচার সেন্টার গড়ে তোলে। এই সেন্টারে এখান প্রায় ২’শ প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফল ,ফুল ও ওষুধি গাছের পরীক্ষামূলক চাষ ও কলমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে।
হর্টিকালচার সূত্রে জানা গেছে, এখানে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদিত হয়েছে থাইল্যান্ডের মেহেদী-২ জাতের আম। এই জাতটি দুই বছর আগে থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়। দুই বছর লালন পালনের পর এবছর প্রথম ফল এসেছে। বছরে দুইবার ফল দেয়। সাইজে বেশ বড় । মিষ্টি ও সুস্বাদু জাতের আম। এখন এই গাছের ডাল থেকে কলমের সাহায্যে চারা তৈরী করে গোপালগঞ্জসহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। তাতে মানুষ সারা বছর আম খেতে পারবেন।
এছাড়া এখানে রয়েছে বারোমাসী জাতের আম। বছরে তিনবার ফল দেয়। ব্রুনাই কিংসহ বিভিন্ন জাতের আমও রয়েছে এখানে। দেশি-বিদেশি আম, জাম, লিচু, নারিকেল, লেবু, কলা, জাম্বুরা, মাল্টা, ড্রাগন, ডুমুর, খেঁজুর, টক আতা, সবেদা, কফি, রাম্বুটান, এ্যাভোকেডো, থাই নারিকেল ও কাজুবাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল, ফুল ও ওষুধি গাছ। এখানে গেলে পাওয়া যাবে অন্ততঃ দুইশত প্রজাতির বিভিন্ন ফল গাছের কলমের ও বীজ থেকে তৈরী করা চারা। বিশেষ করে যেসব বিদেশি ফল আমরা বাজার থেকে বেশি দামে কিনে খাই তার অধিকাংশই এই সেন্টারটিতে পাওয়া যায়। স্বল্পদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হয়ে এসব গাছের চারা।
এই সেন্টারটি এলাকার শুধু কৃষকই নয়, সৌখিন ফল চাষীদের বাগান তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তারা। স্বল্প দামে কলম চারা ও বীজ থেকে তৈরী চারা নিয়ে অনেকেই এখন সাবলম্বী। বিশেষ করে এ জেলায় মাল্টা চাষ করে অসংখ্য কৃষক লাভের মুখ দেখছেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের বেল্লাল আহম্মেদ বলেন, “এখানে বিভিন্ন দেশের ফলের চারা পাওয়া যায়। এখানের চারা নিয়ে মাল্টা বাগান করেছি। প্রচুর পরিমানে ফল হয়েছে। ফলগুলো খুব মিষ্টি ও রসালো। নিজেরা খেয়েছি ও বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেছি। এছাড়া উন্নত জাতের আম, লিচু,কাঁঠাল লাগিয়েছি। এখানের চারা সঠিক জাতের।”
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমি বারোমাসী আম ও ড্রাগনের চারা নিতে আসেছি। এর আগে অনেক চারা নিয়েছি। সেগুলো ভালো হয়েছে। এখানে ভিয়েতনামের নারকেল চারা পাওয়া যায়। সেটাও নিব। এখানে সুলভ মূল্যে সঠিক মানের চারা পাওয়া যায়। বিগত চার বছর আগে আম, লেবু, নারিকেল চারা নিয়ে বাগান করেছি। অনেক গাছে ফল ধরেছে। সেগুলো বিক্রি করে আমার সংসার চলে। এখানে যে চারা চাওয়া হয় ঠিক তাই পাওয়া যায়।”
এছাড়া কাশিয়ানী উপজেলার মাঝড়া গ্রামের জালাল বিশ্বাস, মহেশপুরের জিয়া উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বাগান মালিকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এখান থেকে চারা নিয়ে আমরা ফলের বাগান করেছি। ইতোমধ্যে গাছে ফল এসেছে। ফল বিক্রিও শুরু করেছি। আমাদের দেখে অনেকেই বাগান করতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, “গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে দুই বছর আগে একটা আমের চারা আনা হয়। এটা দেশের অন্য কোন সেন্টারে নেই। এটি বছরে দুইবার ফল দেয়। গাছটি দুই বছর পরিচর্জার পর এখন গাছে আম পেকেছে। এছাড়া দুই শতাধিক প্রজাতির ফলমূলের গাছ ও চারা আমরা বিক্রি করে থাকি। ব্রুনাই কিং আম, ভিয়েতনামের নারিকেল গাছসহ দেশি-বিদেশি ফলের চারা এখানে পাওয়া যায় “ তিনি জেলাবাসীকে এখান থেকে চারা নিয়ে ফল বাগান তৈরী করে নিজেদের ভাগ্য বদলের আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, “শুধু কৃষকই নয় দেশের বেকার যুবক যুবতীরা যদি বিভিন্ন প্রকারের ফলের চাষ করে তাহলে এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হতে পারে।”
সান নিউজ/বিকে/এস