সান নিউজ ডেস্ক:
ক’দিন আগেই বর্ষা মৌসুমে চোখের সামনে বিলিন হয়ে গেছে ফসলী জমি, শেষ সম্বল ভিটেমাটিটুকু । সেই চোখের পানি শুকাতে না শুকাতেই রাজবাড়ীতে আবারও দেখা দিয়েছে পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙন। উদ্বাস্তুর মতো ভিন্ন কোথাও ঘর বাঁধার পর তাও বিলীনের পথে। শুধু পদ্মা নয় এই অসময়ে রুদ্র মূর্তি ধারন করেছে যমুনা নদীও।
রাজবাড়ীর পদ্মা ও সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী প্রতিদিনই গ্রাস করে নিচ্ছে জমিজমা, বড়িঘর। ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ও স্থাপান সরিয়ে নিচ্ছে নদী পাড়ের বাসীন্দারা। নদী ভাঙন প্রতিরোধে নেয়া হয়নি কার্যকর কোন ব্যবস্থা।
রাজবাড়ী জেলার সাথে ৮৫ কিলোমিটার অংশে রয়েছে প্রমত্তা পদ্মা নদী। এর মধ্যে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা, দেবগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নে।
ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে নতুন পাড়া ও ধল্লা গ্রাম। নদীর গর্ভে যাওয়ার পথে দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কাওয়ালজানি, হোসেন মোল্লার পাড়া, আজাহার মাতব্বার পাড়া ,আজিজ সরদার পাড়া ,নতুন পাড়া, ব্যাপারী পাড়া ও ধল্লাপাড়া।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের হিসেবে, এবার শুষ্ক মৌসুমে এরইমধ্যে রাজবাড়ীতে বিলিন হয়েছে অন্তত দেড় হাজার বিঘা ফসলী জমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা। অথচ ভাঙন রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা।
এসব জমিতে কৃষকরা চাষ করছিলেন বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, করোলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। বিঘাপ্রতি তাদের লাভ হওয়ার কথা ছিলো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে জেলায় কৃষকের লাভের খাতা থেকে লোকসানের পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। জমি প্রস্তুত, সার ও কটিনাশকসহ উৎপাদন খরচ ধরলে লোকসানের অংকটা দ্বিগুনেরও বেশি হবে।
জমি ও ফসল হারিয়ে এখন অসহায় হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। আগামী দিন কিভাবে কাটবে তা ভেবে দিশেহারা তারা। ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় কৃষকরা বলেন, নদীর পারে ভালো সবজি হয়, যে কারণে অনেক টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছিলাম। কিন্তু শুকনোর সময় এমন ভাঙন আগে কখনও দেখিনি। গত দুই মাসের ভাঙনে নদী গর্ভে চলে গেছে অনেক জমি। যে জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসার চালাই সেই জমি এখন নদীতে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালানোই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের হিসেবে গত বর্ষা মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত নদী ভাঙনে অন্তত দেড় হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকের রাত কাটে এখন খোলা আকাশের নিচে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদেরও তালিকা তৈরি করা হবে। তাদের খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
শুধু রাজবাড়ী নয়। অসময়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী তীরেও। জেলার চৌহালী উপজেলার মিঠুয়ানি, দেওয়ানগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি স্থানে রুদ্র মূর্তি ধারন করেছে যমুনা নদী। ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে অনেক এলাকা। এছাড়া কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও এনায়েতপুর থানা এলাকার হাটপাচিলসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় পশ্চিম তীরে এনায়েতপুর এলাকায় তীব্র স্রোত বইছে। এ কারণে অসময়ে এই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি ও স্থাপনা সরিয়ে নিচ্ছেন নদী পাড়ের বাসীন্দারা।
তারা অভিযোগ করেন, ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাই ভাঙনের তীব্রতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
তবে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জ অংশে যমুনা নদীর তীরবর্তী এনায়েতপুর এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তুতি চলছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে কাজ শুরু হবে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই মুহূর্তে ভাঙন প্রতিরোধে ছোট প্রকল্প হাতে নেয়া উচিৎ। বড় প্রকল্প কবে পাস হবে আর কবে কাজ শুরু হবে, তার জন্য বসে থাকলে ভাঙনের কবলে বড়বে শতশত পরিবার।