সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ধানক্ষেত থেকে পাওয়া সেই রাশেদুল ইসলামের গলা কাটা লাশের রহস্য ৩ দিনের মধ্যে উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ প্রেস সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী সেলিম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে ও নিজের সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার বিষয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা করেছেন।
এসময় সেলিম জানায়, তার স্ত্রী শেরজা আউয়াল নামের এক ব্যক্তির সাথে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার সাথে তার স্ত্রীর তালাক হয়নি। সেকারনে সেলিম আউয়াল এর উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলো। ভিকটিম রাশেদুল এর সাথে সেলিমের ভালো সম্পর্ক ছিল এবং তাদের মধ্যে সারাদিনে এক-দুইবার দেখা হতো। আসামী সেলিম কাগজপত্র খুঁজতে গিয়ে তার স্ত্রী শেরজার ব্যাগের মধ্যে জনৈক আউয়াল এর একটি মানিব্যাগ পায় এবং তার কাছে রেখে দেয়। সেই মানিব্যাগে একটা সীমের কাগজ, একটা ছবি (যা শেরজা ও আউয়াল এর) এবং আউয়ালের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ছিল।
আসামী সেলিমের (প্রায় এক মাস আগে) মাথায় চিন্তা আসে যে, যদি ভিকটিম রাশেদুলকে হত্যা করে মানিব্যাগটি মৃত দেহের পাশে রেখে দেয় তাহলে পুলিশ সেই মানিব্যাগের ভিতর থেকে জিনিসপত্র দেখে জনৈক আউয়ালকে সন্দেহ করবে এবং আউয়াল আর শেরজার সাথে সংসার করতে পারবে না। সেকারণে সে গত পহেলা বৈশাখের আগে দোকান থেকে মেমরি কার্ড, ঘুমের ঔষধ কিনে রাখে। পহেলা বৈশাখের দিন ভিকটিম রাশেদুলের কাছ থেকে বাংলা মদ ক্রয় করে।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ক্লেমন কিনে তারপর ভিকটিম রাশেদুলকে বলে যে, “আমরা আজ সন্ধ্যার পর একসাথে মদ খাবো।” রাশেদুলও রাজি হয়। সন্ধ্যার পর ভিকটিম রাশেদুলকে নিয়ে সেলিমের বাড়ীর দিকে যায় এবং রাশেদুলকে বাড়ীর সামনে থাকতে বলে আসামী সেলিম বাড়ীতে গিয়ে স্পিড এর বোতলে মদ ছিল সেখানে ঘুমের ঔষধ মিশায় এবং ক্লেমনের বোতলে শুধু মদ রাখে। আসামী সেলিম স্পিডের বোতল, ক্লেমনের বোতল ও মানিব্যাগটিসহ তার কোমড়ে ছুরি নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে ভিকটিম রাশেদুলসহ দুইজনে জনৈক শুকুর ঘোষের ধানক্ষেতের পূর্ব কিনারে যায়। সেখানে রাশেদুলকে স্পিড এর বোতল খেতে দেয় এবং আসামী সেলিম ক্লেমনের বোতল নিয়ে মদ খায়। ভিকটিম রাশেদুল অজ্ঞান হয়ে পরে তাকে সেখানে রেখে দোকান থেকে বিড়ি কিনে এনে বিড়ি খেতে খেতে আসামী সেলিম তার কোমড়ে থাকা ছুরি বের করে ভিকটিম রাশেদুলকে জবাই করে। আসামী সেলিম প্রায়ই এক মিনিট যাবৎ তার গলায় ফেসানি দিয়েছিল এবং মৃত নিশ্চিত করে ছুরি ধুয়ে নিজ বাড়ীতে চলে যায়।
এরপর শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ধানক্ষেতে গলা কেটে খুন করে ঘটনাস্থলে ফেলে রাখে। রাশিদুলের ভাই বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর আলোকে, সিরাজগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফারুক হোসেন এর দিকনির্দেশনায় গোয়েন্দা শাখার একরামুল হোসাইন, অফিসার ইনচার্জ সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করেন। চৌকস এই টিম তথ্য প্রযুক্তি ও নিখুঁত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত তাড়াশ উপজেলার আসান বাড়ী এলাকার মৃত সামছুল হোসেন, পুত্র সেলিমকে গ্রেফতার করে, তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সাননিউজ/ইউকে