মঈনুল হাসান পলাশ, কক্সবাজার:
প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে নষ্ট হচ্ছে কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনে দ্বীপের জেলেদের উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ। এর ফলে ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন জেলেরা।
কক্সবাজার জেলার এই দুইটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাসকারী মানুষের প্রধান জীবিকা সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ। অথচ বিদ্যুৎ না থাকায় নেই কোনও বরফকল। নেই কাঁচা মাছ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় হিমাগারও। এর ফলে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
কুতুবদিয়া দেশের মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জেনারেটর বা সিমিত আকারে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করেন দ্বীপবাসী।
উপকূলীয় উপজেলা হওয়ায় প্রায় জেলেরাই নিকটবর্তী সাগরে মাছ ধরার জন্য বিচরণ করে থাকেন। জানা গেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার ফিশিংবোট রয়েছে কুতুবদিয়ায়। এর মাধ্যমে গড়ে দৈনিক ১২৫ টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে থাকেন তারা।
এই বিপুল পরিমাণ মাছের মাত্র ২ টন মাছ প্রতিদিন কুতুবদিয়াবাসীর প্রয়োজন মেটায়। বাকী মাছগুলো বিক্রি হয় চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে। কিন্তু প্রয়োজণীয় অবকাঠামো না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে প্রতিদিন অন্তত ৫টন আহরিত মাছ নষ্ট হয়। অনেক সময় বিকল্প হিসেবে মাছ শুটকি হিসেবে প্রকৃয়াজাত করা হয়। তাও সারা বছর সেটা সম্ভব হয় না।
কুতুবদিয়া ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় কুতুবদিয়া দ্বীপে কোনো বরফকল নেই, কোনও হিমাগারও নেই। ফলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হতে বরফ সংগ্রহ করে আনতে হয়। যা প্রযোজনের তুলনায় কম। তাছাড়া, আহরিত মাছ দ্বীপে সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় দ্রুত কক্সবাজার-চট্টগ্রামের ফিশারীঘাটে নিতে হয়।
এদিকে কুতুবদিয়ার মতো একই অবস্থা সেন্টমার্টিনে। সেখানেও সংরক্ষণের অভাবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের মৎস্যজীবিরা। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে বর্তমানে সাড়ে আট হাজার মানুষের বসবাস। এই দ্বীপের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের সঙ্গে সরাসরি নিয়োজিত। বর্তমানে এখানে ছোট আকারের সাড়ে তিনশ ফিশিংবোট সাগরে মৎস্য আহরণের কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি মাছ সেন্টমার্টিন উপকূলে ধরা পড়ে। জানা গেছে, দিনে গড়ে এক থেকে দেড় টন মাছ আহরণ করেন সেন্টমার্টিনের জেলেরা। এখানেও বরফকল না থাকায় আহরিত মাছ কাঁচা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। দ্বীপের দৈনন্দিন চাহিদা মিটাতে দৈনিক ৫০০ কেজি মাছ প্রয়োজন হয়। বাকী মাছ সাগর পথে পাঠানো হয় টেকনাফে। সংরক্ষণের অভাবে অনেক সময় কাঁচা মাছ অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন স্থানীয় জেলেরা।
সেন্ট মার্টিনের ফিশিংবোট মালিক রশিদ আহমদ (৪৭) জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে, সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে জেলেরা মাছের ন্যায্যমূল্য পেতেন।
বর্তমানে উপকূলবাসী নিজেদের দৈনন্দিন কাজে জেনারেটর বা সৌর বিদ্যুৎ ব্যাবহার করছেন। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে বা বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্য এ ব্যবস্থা মোটেও উপযোগী নয়। ফলে সেখানে গড়ে উঠছেনা কোনও বরফকল বা হিমাগার।
ভরা মৌসুমে কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনের মতো দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে একটি ফিশিংবোট দিনে ২ থেকে ৩ বার সাগরে মাছ আহরণে যেতে পারে। কিন্তু হিমাগারের অভাব ও বরফের যোগান না থাকায় তা সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে।
সান নিউজ/সালি