কামরুল সিকদার, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পর্ণোগ্রাফি চক্রের ফাঁদে পড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা খুইয়ে দিশেহারা ১ প্রবাসীর স্ত্রী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীনারী বাদি হয়ে ৬জনের বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে ২ নারীর গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ওসি মো. গোলাম রসুল। এর আগে, বুধবার রাতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের ২ নারীকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী রোজ ভ্যালি গার্ডেন থেকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার সিকিপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন মোল্যার মেয়ে কাকলী বেগম (৩২) ও পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার আদর্শ গ্রামের মো. ইউসুফ খানের মেয়ে তানিয়া খানম (৩২)।
এ প্রতারক চক্রের বাকি আসামিরা হলো, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মো. মফিজুর রহমানের ছেলে সেলিম খান ওরফে সুমন শিকদার (৩৩), তাঁর স্ত্রী ফারজানা বেগম (৩২), একই ইউনিয়নের নয়নীপাড়া গ্রামের মুক্তার মোল্লার ছেলে মুজাহিদ (২৫), ও কুমিল্লা জেলার মুরদনগর উপজেলার ঘোড়াশাল গ্রামের শাহ আলমের ছেলে মো. বদিউল আলম তুহিন (৩৪)। তারা সকলেই পর্ণোগ্রাফি চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
মামলা ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মালয়েশিয়ার প্রবাসী মিলন শিকদারের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের শশুর বাড়িতে পার্শবর্তী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার আদর্শ গ্রামের মো. ইউসুফ খানের মেয়ে তানিয়া খানম বিয়াইন হওয়ার সুবাদে আসা যাওয়া করতেন। এক পর্যায়ে গত ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তানিয়া খানম বিয়াইন সোনিয়া আক্তারের মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত ভিডিও নিজের মোবাইলে নিয়ে সেই ভিডিও ফাইল সুপার এডিটিং করে অশ্লীল ভিডিও তৈরী করেন। এরপর থেকে ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সোনিয়ার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় পর্ণোগ্রাফি প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রবাসীর স্ত্রী সোনিয়া আক্তার গত ২২ ডিসেম্বর বোয়ালমারী থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৯।
আরও পড়ুন: উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক
মামলার পরে বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক শামীম দেওয়ানের নেতৃত্বে পুলিশের এক টিম অভিযান পরিচালনা করে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার রোজভ্যালী পার্ক থেকে ২ আসামি কাকলী বেগম ও তানিয়া খানমকে গ্রেফতার করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেয়ে আসামী বদিউল আলম তুহিন পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, তানিয়া খানম সম্পর্কে আমার বিয়াইন হয়। সেই সম্পর্কের জেরে আমার শ্বশুর বাড়ি এসে মোবাইল থেকে আমার ব্যক্তিগত ভিডিও নিয়ে সুপার এডিটিং করে। এরপর থেকে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করলে উপায় অন্তর না পেয়ে ২২ ডিসেম্বর থানায় ৬ জনের নামে মামলা করি।
অভিযান পরিচালনাকারী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মো. শামীম দেওয়ান বলেন, প্রবাসীর মামলার ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের ২ নারী সদস্যকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী রোজ ভালী গার্ডেন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সকলেই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: ফায়ার ফাইটার নিহতে মামলা
বোয়ালমারী থানার ওসি মো. গোলাম রসূল বলেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলার ২ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ সময় বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সান নিউজ/এমএইচ