মো. নাজির হোসেন, (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে থাকায় বিগত ১৬ বছরে মুন্সীগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিলেনি কোনো বরাদ্ধ। আওয়ামী লীগ শাসনামালের বরাদ্দে জোটেনি এক টাকাও। আর সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টিতে ঝুঁকি নিয়েই চলে আসছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে চিঠির পর চিঠি দিয়েও মিলেনি কোনো সাড়া।
আরও পড়ুন: গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বরাদ্ধের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এমনই বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে জেলা সদরের মিরকাদিম পৌরসভাররিকাবীবাজার এলাকার শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয়তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ও দ্বিতল বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন এখন বিবর্ণ রূপ নিয়েছে। জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যালয়ের দু’টি ভবন। এ অবস্থায় দিন দিন কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী থেকে বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়ে ৪৫০ জনে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের শ্রেনীকক্ষ গুলোর দেয়ালের পলেস্তার খসে খসে পড়ছে। মেঝে নষ্ট হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে উঁকি দিচ্ছে ফাঁটল। বেশীর ভাগ শ্রেনীকক্ষের জানালার গ্রিল থাকলেও নেই কপাট। শ্রেনীকক্ষ গুলোতে নেই পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক লাইট ও পাখা। এমনকি বেঞ্চের অভাব স্পষ্টত: ফুটে উঠেছে। প্রায় দেড়যুগে শ্রেনীকক্ষে পড়েনি রংয়ের আঁচর। এমন অবস্থায় শ্যাত শ্যাতে ও বিবর্ণ রূপ নিয়েছে বিদ্যালয় ভবন।
বিদ্যালয় কর্তপক্ষ জানায়, সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌর বিএনপির সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন ১৯৯৪ সালে তৎকালীন খালেদা জিয়ার শাসনামলে শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে এটি ছিল নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পাঠদান শুরু হয় টিনসেট ভবনে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠাতা জসিমউদ্দিনের অনুদানে বিদ্যালয়ের তিনতলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়। ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। ২০০৩-২০০৪ অর্থ-বছরে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অর্থায়নে বিদ্যালয়ের দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন, জানালার গ্রিল না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি ঢুকে একাকার হয়ে উঠে শ্রেনীকক্ষ। শীতকালেও ঠান্ডার হিমেল হাওয়া ঢুকে জানালা পথে। বিদ্যালয়ের প্রাচীর দেয়াল না থাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা হরহামেশা। এতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় পাঠদান চলে শিক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন: শ্রদ্ধায় সিক্ত হতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
আওয়ামীলীগ সরকারের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জালালউদ্দিন বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছে যে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৪ টি করে ফুটবল তুলে দেওয়া হয়। শেষে শুধু মাত্র জিয়াউর রহমানের নাম থাকায় আমাদের ফুটবল বরাদ্দ চোখের সামনেই কেড়ে নেওয়া হয়।
শুধু তাই-ই নয়, স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী আমাদের বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তা আগেভাগে জানতে পেরে যান আওয়ামীলীগ দলীয় মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। এতে ওই সংসদ সদস্যের চাপের মুখে শহীদ মিনারটি জেলা সদরের অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করে দিতে বাধ্য হন ওই ব্যবসায়ী।
প্রধান শিক্ষক মো. জালালউদ্দিন আরো বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শুধু মাত্র নামের সঙ্গে শহীদ জিয়াউর রহমান থাকায় এ বিদ্যালয়টি উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক টাকাও বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের নাম করনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম থাকাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। এতে বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো উন্নয়নের ছোয়া পায়নি বিদ্যালয়টি। আগে যা হয়েছে এখন বলে লাভ নেই। এখন এ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমাদের মনযোগী হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু
জেলা শিক্ষা অফিসার ইসমাঈল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের বিষয় দেখে থাকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় শুধু মাত্র শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাজেই বিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া, না পাওয়ার বিষয় আমি জানি না।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মৌরিন আক্তার মৌ সাথে যোগাযোগ করা হলে, আমি ইঞ্জিনিয়ার সহ পরিদর্শন করেছি। খুব শিগগিরই বরাদ্দ হবে। তবে বিগত ১৬ বরাদ্দ হয়েছিলো কিনা, তার উত্তর দিতে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি এখানে নতুন যোগাদান করেছি। কাজেই বিদ্যালয়টি সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে বৈষম্যের স্বীকার হয়ে থাকলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।
সান নিউজ/এএন