নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের কারণে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনা নদীর পানি। একইসঙ্গে ফুলজোড়, ইছামতি, হুরাসাগর ও করতোয়াসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে।
পানি বাড়ার কারণে আবারও তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল। ডুবে যাচ্ছে ফসলভরা জমি। এতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে কৃষকদের মধ্যে।
কৃষকরা জানান বছরের এমন মৌসুমে বন্যায় ফসলের ক্ষতি হলে পানি নেমে যাওয়ার পর নতুন করে জমি চাষ করলে ফসল নাবি হয়ে যাবে। একারণে আগামী রবি শস্যের আবাদ তাঁরা করতে পারবেন না। তাঁরা জানান, বছরের একটি মৌসুমের ফসল ক্ষতি হলে তাঁদের মতো ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের দুর্দশার শেষ থাকবে না।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ মিটার। এখানে ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৬ মিটার পানি। ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবো সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুনের প্রথম থেকেই যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে বাড়তে শুরু করে। গত ২৮ জুন উভয় পয়েন্টেই বিপদসীমা অতিক্রম করে। এরপর ৪ জুলাই থেকে আবার কমতে শুরু করে এবং ৬ জুলাই বিপদসীমার নিচে নেমে যায় যমুনার পানি। ৯ জুলাইয়ের পর ফের বাড়তে থাকে এবং ১৩ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বিপদসীমা অতিক্রম করে কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে। টানা ২৫ দিন দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হওয়ার পর ৭ আগস্ট যমুনার পানি উভয় পয়েন্টেই বিপদসীমার নিচে নেমে যায়। এর মধ্যে কয়েক দফায় যমুনার পানি কমতে ও বাড়তে থাকলেও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কাজিপুর পয়েন্টে আবার বিপদসীমা অতিক্রম করে যমুনার পানি। এরপর থেকে যমুনার পানি দুটি পয়েন্টেই হ্রাস-বৃদ্ধি হতে থাকে। ১ অক্টোবর কাজিপুর এবং ২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে আবার যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করল।
এদিকে, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে যাচ্ছে ফসল। এর আগে বন্যায় জেলায় প্রায় সোয়া ২০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও এরইমধ্যে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তিন হাজার ৪০৬ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৯৩১ হেক্টর জমির মাসকলাই, ২৩৪ হেক্টর শীতকালীন সবজি, ৮০ হেক্টর বাদাম ও ৬৮ হেক্টর জমির মরিচ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
সাননিউজ/আরএইচ