মো. নাজির হোসেন, (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: রাজধানীর কাছের জেলা মুন্সীগঞ্জের গোল সোনা খ্যাত আলুর বাজারে নৈরাজ্যের সৃষ্টির হয়েছে। সিন্ডিকেটের কব্জায় দেশের বৃহত আলু উৎপাদনকারী এ জেলায় হু-হু করে বাড়ছে দাম। ১৫ দিনের ব্যবধ্যানে বেড়ে কেজি প্রতি আলুর দাম দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা। রেকর্ড সর্বোচ্চ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে এখন এ জেলার বাজার গুলোতে। এতে গোল সোনা আলু যেন এখন ক্রেতা সাধারনের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।
আরও পড়ুন: আগ্নেয়াস্ত্রসহ ১৪ ডাকাত গ্রেফতার
চলতি বছরের আলু উত্তোলন মৌসুমের শুরুতে কৃষক হাত থেকে পাইকারী দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হতো ২৫ থেকে ২৮ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সেই আলুর দাম বাড়তে বাড়তে ১৫ দিন আগেও খুচরা বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকাল সোমবার খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে মতে জেলার হিমাগার গুলোতে এখনও ৩৬ হাজার মেট্রিক টনের বেশী আলু মজুদ রয়েছে।
আলু দাম বেড়ে ক্রেতার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে কথা হলে একাধিক পাইকার অভিযোগ করেন, হিমাগার কেন্দ্রীক বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। হাতে গোনা বড় ব্যবসায়ীদের একেক জনের কাছে এখনও ৫ হাজার বস্তা থেকে ১০ হাজার বস্তা করে আলু মজুদ রয়েছে। আর ওই সিন্ডিকেটই আলুর দাম নিয়ন্ত্রন করছে। হিমাগারে মজুদ আলুর দাম নির্ধারন করছে ওই সিন্ডিকেট। এতে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও চড়া দামেই আলু খেতে হচ্ছে জেলাবাসীকে। এজন্য সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারাকেই দোষারোধ করেছেন পাইকাররা। একই সঙ্গে ঢিলেঢালা বাজার তদারকির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেছেন তারা।
শহরের প্রধান বাজারে সবজি বিক্রেতারা মূল্য তালিকায় আলুর কেজি ৭০ টাকা উল্লেখ করলেও বিক্রি করছেন ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। সোমবার সকালে এ বাজারের ক্রেতা মঈনউদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি এক কেজি কিনেছেন ৭৫ টাকায়। আবার একই বাজারের অপর ক্রেতা জসিম মিয়া জানান, তিনি কেজিতে ৮০ টাকা দরে ২ কেজি আলু কিনেছেন।
শহরের দেওভোগ বাজারের ক্রেতা জাকির হোসেন জানান, একই দিন সকালে তিনি ওই বাজার থেকে কেজি প্রতি ৮০ টাকা দরে আলু কিনেছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারদের কাছ থেকেই ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে আলু কিনছি আমরা। এরমধ্যে ভালো ও খারাপ দুই ধরনের আলু রয়েছে। ক্রেতা যখন আলু নেন, তখন বেছে বেছে ভালো আলুই ব্যাগে ভরেন। এতে খারাপ আলু গুলো আর বিক্রি করা যায়নি। তাই ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি না করলে লাভ হবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কল্যান কুমার সরকার জানান, জেলার ৬ টি উপজেলায় সচল ৫৮ টি হিমাগারে ৮১ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। এরমধ্যে খাবারের জন্য মজুদ রয়েছে ৩৬ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন আলু। বাকী ৪৪ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন রয়েছে বীজ আলু। তিনি আরো জানান, গত মৌসুমে জেলার ৩৪ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়।
কৃষির অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কল্যান কুমার সরকার বলেন, এই আলু নিয়েই অসাধু সিন্ডিকেট কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। হিমাগার গুলোতে সিন্ডিকেট আলুর দাম নিয়ন্ত্রন করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারনেই আলুর দাম বেড়েছে। তবে আমরা বাজার নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছি।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. সামির হোসাইন সিয়াম বলেন, যারা আলু মজুদ করেছেন, তারাই ফোনে ফোনে দাম নির্ধারণ করছেন। তাদের নির্ধারিত দামেই সারাদেশে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এতে বাজারে বেড়েছে দাম।
সান নিউজ/এএন