সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: কাজের কার্যাদেশ অনুযায়ী চুক্তির দিন থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লে আউট নিয়ে কাজ শুরুর বিধান রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড দরপত্রের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৮ মাস সময়ক্ষেপণ করে। যথা সময়ে কাজ শুরু না করায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪ কোটি টাকার কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ দুই বছর ধরে শুধু মাপামাপি করছে।
আরও পড়ুন : কিশোরগঞ্জের চন্দন ফের যুক্তরাষ্টের সিনেটর
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হলেও চুক্তি সম্পাদনের ৮ মাস পর এসে নামমাত্র কাজ শুরু করেছে বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড।
তথ্যানুসন্ধান বলছে, আইনি জটিলতায় এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফায় আটকে গেলেও এলজিইডির কতিপয় প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন জেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করে এরই মধ্যে প্রায় শতাধিক কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। কয়েকটি জেলায় আরও বেশ কিছু কাজের কার্যাদেশ প্রক্রিয়া চলমান আছে। যে কাজগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট শংঙ্কা।
আরও পড়ুন : সোনার বারসহ আটক ১
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় অল্প কিছু অংশে বেকো মেশিন দিয়ে গর্ত করছে। এসময় রিকশা চালক জব্বার জানায়, চার পাঁচ দিন ধরে রাস্তার পাশে কাটছে। এর আগে অনেক মাপঝোপ দিয়েছে। শুনছি কাজের সময় নাই, এজন্য মনে হয় এখন শুরু করেছে। আমাদের এলাকায় একটি কাজ তিন বছর পর শেষ হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বছরের শুরুতেই সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বনবাড়িয়া আরএইচডি থেকে কান্দাপাড়া হাট পর্যন্ত ২৫শ ৮০ মিটার কাজের দরপত্রের আহ্বান করা হয়। দরপত্রে ৬ দরদাতা অংশ নিলেও ১০ শতাংশ বার পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ পায় বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড। এবছর এপ্রিল মাসে ৪কোটি ২৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি পত্রে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ করার সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, এই কাজটি গত ৫ মাস আগে বাতিলের জন্য চিঠি প্রদান করা হয়, কিন্তু এরপর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরপরও কিছু দিন আগে বেশ কিছু কাজ পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সিরাজগঞ্জে টেন্ডার দিলেই কাজ পায় এরা।
এসময় তিনি আরও জানান, ১০ শতাংশ কাজের রেট কেবলমাত্র থাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর ও প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে। এদের সহায়তায় রেট নিয়ে ইচ্ছামতো দরপত্র আয়ত্তে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন যেদিন থেকে সিরাজগঞ্জ এলজিইডিতে অংশ নেয়, সে দিন থেকে জেলার স্থানীয় ঠিকাদাররা আর কাজ পায় না, বিপুল অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় ঠিকাদারদের কাছে কাজ গুলো হস্তান্তর করে থাকে।
আরও পড়ুন : ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ
বরেন্দ্র কনষ্ট্রাকশন লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী খোকন মির্জার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা, এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, এ সময়ের মধ্যে শেষ না হলে সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য কাজ বাস্তবায়ন করা। তিনি আরও জানান, আমরা কাজ বাস্তবায়নের কৌশল হিসেবে ২৮ দিনের চিঠি প্রদান করেছিলাম।
এ বিষয়ে রাজশাহী ওয়েডিনিং প্রকল্পের পরিচালক বারেক মন্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ওয়েডিনিং কাজ করতে সময় লাগে না, কাজ ধরা টাই মূল বিষয়। আমাদের টার্গেট জুনেই কাজ শেষ করা। তার কাছে সারা দেশে কাজ পাওয়া এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনারদের নমনীয় মনোভাব কেন, এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তিনি সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
এবিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি, ক্ষুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ঠিকাদারকে না জানিয়েই কাজ বাতিল, এলজিইডির কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় গত বছর ২৭ কোটি টাকা উন্নয়ন বঞ্চিত হয় সিরাজগঞ্জবাসী। এছাড়া খাল খননে মৃত ব্যক্তির নামে স্বাক্ষর ও ভুয়া মাষ্টার রোল বানিয়ে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন, জেলার একাধিক রাস্তায় নিম্নমানের কাজ, নিম্নমানের কাজ করেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন ছাড়াই কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান, তাড়াশ বারুহাস ও তাড়াশ কুন্দইল রাস্তায় ১২ কোটি টাকার কাজের অনিয়মের প্রমাণ পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কাজ না করেই বিল উঠানো,দরপত্র ছাড়াই কাজ বাস্তবায়ন,ডিজিটাল দরপত্রে কারচুপি নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এলজিইডি। যার কারণে প্রকাশ্যে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।
সান নিউজ/এমআর