মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে একের পর এক অনৈতিক আচরণ করে যাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা যুবদলের সদস্য ও মেদিনীমন্ডল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সচিব লুৎফর রহমান পাভেল মোল্লা।
আরও পড়ুন: নিখোঁজ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
তার বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আ'লীগের পাটি অফিস দখল, পদ্মার অবৈধ বালু উত্তোলন, মাওয়া মাছের বাজারে চাঁদাবাজি, অটোরিকশা-মিশুক ও সিএনজি স্টান্ডের চাঁদাবাজি'র অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তার ছত্রছায়া'য় আ’লীগের নেতাদের থেকে চাঁদা ও মাছ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ।
পাভেল মোল্লার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মেদিনীমন্ডল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম গাউস সিদ্দিক, যুবদল নেতা ওমর ফারুক লিমন, মো. শিবলু, মেদিনীমন্ডল ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শাহ্ আলম মোল্লা, মেদিনীমন্ডল ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা সিরাজুল মাদবর, যুবলীগ নেতা খলিল বেপারী প্রমুখ। তিনি ৫ আগষ্টের পরে আ’লীগ নেতা সিরাজুল মাদবর ও খলিল বেপারীকে বানিয়েছে নব্য বিএনপি নেতা
এছাড়াও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. মোক্তার হোসেন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে স্হানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীদের সখ্যতা। তিনি অর্থের বিনিময়ে আ’লীগ নেতাদের শেল্টার দিচ্ছেন। আ’লীগের নেতার ড্রেডার তার শেল্টারে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
স্হানীয় একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে যানা যায়, ৮০ দশকের মাঝামাঝি জাতীয় পাটির রাজনীতি থেকে শুরু পাভেল মোল্লা'র। পরে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে ইতালির পাড়ি দেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এসে বিকল্পধারার রাজনীতি করেন। এরপরে ২০০৯ সালে অর্থের প্রভাব খাটিয়ে মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি হন। এখান থেকেই তার বিএনপির রাজনীতি শুরু।
আরও পড়ুন: মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২
নেতাকর্মীরা আরও জানায়, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরে গত ৫ অক্টোবর মেদিনীমন্ডল ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পাটি অফিস দখল করে সেখানে ১ নং ওয়ার্ডের বিএনপির পাটি অফিস উদ্বোধন করেন পাভেল মোল্লা। ১ নং ওয়ার্ডের সিরাজুল মাদবর ও খলিল বেপারীরা আ'লীগ থেকে রাতারাতি বিএনপি নেতা হয়ে যান পাভেল মোল্লা'র ছত্রছায়া'য়। ক্লাব উদ্ধোধন সময় মেদিনীমণ্ডল ১নং ওয়ার্ড আ'লীগের উপদেষ্টা হাজী সোলেমান কমান্ডারের ছেলে সোহেলের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেয় এবং আওয়ামী লীগ নেতা সাথী মির থেকে ১ মণ গরুর মাংস জোর পূর্বক আদায় করে ক্লাব উদ্ধোধনের অনুষ্ঠান করেন।
লৌহজং উপজেলায় অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাভেল মোল্লর লোকজন মাওয়া মাছ ঘাট থেকে প্রতিদিন ৮ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এতে সহযোগীতা করেন তথাকথিত যুবদল নেতা শিবলু, অনিক, শওকত, সাগর গংরা। মাওয়া মাছ বাজারের ইজারাদার মহাদেবের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ টাকা চাঁদা আদায়। আ'লীগ নেতা তাঁরা মাদবর থেকে ১ লাখ টাকা ও আওয়ামী লীগ নেতা বালু ব্যবসায়ী আবু বক্কর থেকে দুইবারে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়। এছাড়াও তার নেতৃত্বের ছত্রছায়া'য় মাওয়া টোল প্লাজা এলাকা থেকে অটোরিকশা, মিশুক ও সিএনজি স্ট্রান্ড থেকে শিবলু, অনিক, সাগর দৈনিক চাঁদা আদায় করেন। রাতের আঁধারে পদ্মা নদীতে থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ। তার দুইটি বালু কাটার ড্রেজার রয়েছে। সাম্প্রতিক সময় উপজেলা প্রশাসন তার কাটার ড্রেজার দুইটি জব্দ করেছেন।
আরও জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর সোমবার রাত ৭ টার দিকে ইউনিয়নের জশলদিয়া নতুন বাজারের রাস্তা থেকে পাভেল মোল্লা' সহযোগী মার্ডার ও ছিনতাই মামলার আসামি মিঠু মোল্লা ইউনিয়নের সবুজ গ্রামের বাসিন্দা ওমর ও জলিলের কাছ থেকে অটোরিকশা থামিয়ে ৮০ হাজার টাকা মাছ ছিনতায় করে।
চাঁদার বিষয় মাওয়া মাছঘাটের ইজারাদার মহাদেব, বালু ব্যবসায়ী তারা মিয়া সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা চাঁদা দেয়ার বিষয় অশিকার করেন। পরে ফোন করে জানেন, আপনি কে বলছেন। সাংবাদিক জেনে ফোন কেটে দেন।
মাছ ছিনতাইয়ের বিষয়ে জেলে ওমর ফারুক তার ভিডিও বক্তব্যে বলেন, পাভেল মোল্লার ভাতিজা মিঠু মোল্লা হোন্ডা নিয়ে আমাদের মিশুগাড়ি থামিয়ে দুই ট্রে মাছ নিয়ে যায়। নেয়ার সময় বলছে তোরা যাগা, নাইলে পুলিশে দিয়া দিমু।
মেদিনীমণ্ডল ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি সাহেদ আলী মাদবর বলেন, আ’লীগের পাটি অফিস দখল করে, বিএনপির পাটি অফিস বানায়ছে। এলাকায় মানুষকে হুমকি ধমকি দেয়। মানুষকে মারধর করে। তার ভাতিজা সুমন মোল্লা, চাচা মিঠু মোল্লা মানুষের জমি জমা জোর করে বেচা-কেনা করে।
অভিযোগের বিষয়ে লৌহজং উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব লুৎফর রহমান পাভেল মোল্লা তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ও আ’লীগ নেতাদের থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয় সত্য নয় বলেন। তিনি আরও বলেন, যুবদলের সাবেক কিছু নেতা, এখন তাদের পদ-পদবি নেই। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে লৌহজং উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. মোক্তার হোসেন খান অভিযোগ গুলো অসত্য বলে বলেন। উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রশিদ সিকদারের লোকজন ড্রেজার ব্যবসা করে। আমি বিগত আ’লীগ সরকারের আমলে কারা নির্যাতিত নেতা। আর আমাদের যুবদলের কেউ অপকর্মে করলে ব্যবস্থা নিবো।
মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক দেওয়ান মুজিবুর রহমান অভিযোগ গুলোর বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে, তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবে কেন্দ্রীয় যুবদল। আর আ’লীগের সাথে সখ্যতা থাকলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সান নিউজ/এএন