নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা: ঠিকাদারি কাজ নিতে চাপ প্রয়োগ কিংবা চাঁদা দাবির ঘটনা নয়, বরং খুলনার ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে রুকাইয়ার সঙ্গে প্রেমের জের ধরে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কলেজছাত্র মো. আবু সাঈদ ও তার তিন সহপাঠী। তারা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে ঠিকাদার গুলি চালালে লক্ষ্যভ্রষ্ট গুলিতে এক কিশোরী আহত হয়। উল্টো চার কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে ঠিকাদার চাঁদাবাজি মামলা করেছেন। সেই মামলায় প্রায় একমাস ধরে কারাগারে রয়েছেন তিন কলেজছাত্র।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে এমন চিত্র। রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ অলিউল ইসলাম এই তথ্য উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আবু সাঈদের সঙ্গে তিন বছর ধরে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া এলাকার ঠিকাদার ইউসুফ আলীর মেয়ে কলেজছাত্রী রুকাইয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঠিকাদার তার মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিচ্ছেন, এমন খবর শুনে গত ২৮ আগস্ট আবু সাঈদ ও তার তিন সহপাঠী ঠিকাদারের বাড়িতে যান। তারা ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
তখন তার স্ত্রী ও শ্যালক ওই চারজনকে দ্রুত বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা সিড়ি দিয়ে দ্রুত নামার সময় ঠিকাদার লাইসেন্স করা পিস্তল হাতে তাদেরকে ধাওয়া করেন। এ সময় তাদের লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়েন। লক্ষ্যভ্রষ্ট একটি গুলি প্রতিবেশী কিশোরী লামিয়ার পায়ে বিদ্ধ হয়।
কিন্তু ঠিকাদার ইউসুফ আলী মেয়ের প্রেমের ঘটনা গোপন করে ওই চার ছাত্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, তিনি একটি ঠিকাদারি কাজ পান। সেই কাজটি বিক্রি করতে তাকে চাপ দেওয়া হয়। তিনি কাজ বিক্রি করতে না চাইলে চার যুবক তার বাড়িতে গিয়ে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৯ আগস্ট মামলার পর পুলিশ ওই চার কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে ইসমাইল মল্লিক সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অন্য তিনজন বিনা অপরাধে এখনও কারাগারে রয়েছেন। মানবাধিকার কমিশনের তদন্তদল ইউসুফ আলীর বাড়িতে কথা বলতে গেলেও তারা কথা বলেননি, এমনকি গেটও খোলেননি। সাঈদের সঙ্গে রুকাইয়ার একান্ত ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও এবং মোবাইলে ভিডিও কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে চাঁদাবাজির মামলাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত এবং গুলি করার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ২৮ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলীর বাড়ি গিয়েছিলেন তার মেয়ে রুকাইয়ার প্রেমিক সাহেদ ও তার তিন বন্ধুরা। তারা প্রেমের সম্পর্কের কথা বলতেই ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দেন ঠিকাদার। তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। ঠিক সেই সময় একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী লামিয়ার বাম পায়ে বিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় ঠিকাদার শেখ ইউসুফ আলী নিজেকে বাঁচাতে ও ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে মেয়ের প্রেমিক সাহেদ ও তার তিন সহপাঠীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ চার যুবককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।