নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপ, কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের বেশির ভাগ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।
এখনও বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার, বাঙ্গালীর ৩ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিষখালীর ৩৫ সেন্টিমিটার, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চতুর্থ দফা এ বন্যায় রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার মদনে নতুন করে ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে।
ধুনট (বগুড়া) : বগুড়ায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর পানি বাড়ছেই। গতকাল শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ও বাঙ্গালী নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নদীতীরের চর ও নিম্নাঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে সবজি ও রোপা আমনের ক্ষেত।
চরের কৃষক করিম মিয়া ও নাসির আলী বলেন, 'জীবনে এত দীর্ঘমেয়াদি বন্যা দেখি নাই। কত দিন পানিবন্দি থাকার পর তা কমে গেল, হঠাৎ আবার পানি বাড়তে থাকায় দুশ্চিতায় আছি।' বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, উজানে ও স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ভাটিতে পানি কম থাকায় দু-এক দিনের মধ্যে পানি নেমে যাবে।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ঢুকে শহরের রাস্তাঘাট, বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষেতে জমে থাকা পানি নামছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষি ও খামারিরা। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ এবং মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নদীর পানি বেড়েছে এবং টানা বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কৃষকরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন এবং আগাম রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বিষখালী নদীর ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে কাঁঠালিয়া ও রাজাপুরের নদীতীরের গ্রামগুলোতে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের কাছে যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে একই সময়ে কাজিপুর পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গত দুদিন হলো শুরু হওয়া বর্ষণে জেলার যমুনা নদীতীরবর্তী পাঁচ উপজেলার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। দফায় দফায় পানি বাড়ার ফলে যমুনা নদীতীরবর্তী পাঁচটি জেলায় ফসলহানির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় কুড়িগ্রাম সদরসহ কয়েকটি উপজেলার শতাধিক চরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক। ফলে যোগাযোগের ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া এসব এলাকায় যাতায়াতের কোনো মাধ্যম নেই।
নীলফামারী : গতকাল বিকেল ৩টায় ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এ সময় নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৫ গ্রামের প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের বিস্তৃত আমনক্ষেতে এখন বুক সমান পানি। বোঝার উপায় নেই দুদিন আগে এখানে আমন ধানক্ষেত ছিল। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১৯০ হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হলেও বাস্তবে ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তা ছাড়া চতুর্থ দফা পানি বাড়ার ফলে খামারের মাছও ভেসে গেছে।
মদন (নেত্রকোনা) : মগড়া নদীর পানি বেড়ে নেত্রকোনার মদনের সদ্য রোপণ করা ৬০০ হেক্টর আমন জমি তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকদের মতে, ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
সান নিউজ/আরএইচ/বিএস