ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন ৫ শ্রমিক। যাদের ২ দিনেও সন্ধান মেলেনি।
আরও পড়ুন: মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি
গত শনিবার রাতে মেঘনার গাজীপুর চর পয়েন্টে এ দুর্ঘটনট ঘটে। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তবে স্থানীয় মনে করছেন,রাতে জাহাজের ধাক্কায় ড্রেজারটি ডুবে গেছে।
এদিকে দুর্ঘটনার দুই দিন পরে সোমবার সকাল থেকে নিখোঁজদের উদ্ধারে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন- নুরে আলম (৪০), সিয়াম (২২), আরিফ (২৫), হারুন (৪০) ও তানজিল।
তাদের বাড়ি সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৫ ও ৬ ওয়ার্ডের বিভিন্ন গ্রামে। সন্ধান না মেলায় সলিল সমাথির আশংকা করছেন স্বজনরা।
এদিকে নিখোঁজদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তারা বেচেঁ আছেন নাকি মারা গেছেন জানেনা তারা । স্বজনদের প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন।
আরও পড়ুন: বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন
নিখোঁজ হারুন এর বড় মেয়ে অঙ্কুরা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,বৃহস্পতিবার দিনও বাবা মায়ের কাছে ফোন দেয়, মা নামাজ পরে দেখে আমার ছেলের সাথে কথা বলে মোবাইলে ৫০ টাকা রিজার্জ করে দিতে বলে।তারপরে আমাদের সাথে আর কারো কথা হয়নি। বাবাই আমাদের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস। বাবার কিছু হয়ে গেলে আমরা কিভাবে চলবো।
নিখোঁজ হারুনের স্ত্রী নুর জাহান বলেন, পরশু বিকেলে স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তার। এরপর থেকে আর যোগাযোগ নেই। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন,আমার ৩ টা মেয়ে ওর বাবার কিছু হলে ওরা তো এতিম হয়ে যাবে। আমার সংসারের হাল কে ধরবে।
হারুনের মেয়ে লিয়া ও লিমা বলে, জীবিত বা মৃত, যে অবস্থায়ই হোক, বাবার সন্ধান চাই।
নিখোঁজ তানজিলের মা ফাতেমা বেগম বলেন, ছেলের সন্ধান চাই, ছেলে কোথায় আছে জানি না।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে রথযাত্রা উদযাপন
এই ঘটনায় ড্রেজারের মালিক শাহে আলম ভোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এসময় তিনি বলেন,গত মাস ধরে আমি সহ আমার ৩ পার্টার সহ ৫ লেবার নিয়ে আমরা মেঘনা নদীতে সরকারি ইজারা দেওয়া অংশে বৈধ ভাবে বালুকাটি। কিন্তু শনিবার রাতে থেকে আমার লেবারদের ড্রেজার সহ খুজেঁ পাচ্ছিনা। এমনকি তাদের সকলের ফোন নম্বর পর্যন্ত বন্ধ পাচ্ছি। তারা কি বেঁচে আছে না মারা গেছে তাও জানিনা। তাই তাদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
স্থানীয় অন্য ড্রেজার লেবাররা জানান,মেঘনার কাজীর চরে গত কয়েকদিন ধরে বালু কাটছিলো। আফসানা নামের এই ড্রেজারটি বালুকাটার সময় পাইপ চরে আটকে যায়। দুইদিন ধরে তারা চেষ্টা করে পাইপটি উদ্ধার করতে পারেনি।৫জন শ্রমিক এই ড্রেজারে দুইদিন ধরে ছিলেন। ধারনা করা যাচ্ছে রাতে মেঘনার পানির তীব্র স্রোতে উল্টে যেতে পারে ড্রেজারটি। আর শ্রমিকরা ভিতরে রুম আটকে ঘুমাতে থাকায় এমনটা হতে পারে বলে জানান।
ফায়ার সার্ভিসের লিডার পরেশ চন্দ্র পাল বলেন,মেঘনা নদীতে আমরা বালু লোডবাহী একটি ড্রেজার মালিক ও শ্রমিক সহ ৫ জন নিখোঁজের সংবাদ পাই। সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনা স্থলে আসি উদ্ধার করতে।ইতিমধ্যে ড্রেজার টির সন্ধান মিলেছে। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধার কাজ ব্যহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ৫
ভোলার নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যুৎ কুমার বাড়ুয়া বলেন, মেঘনার গাজিপুর চরে বালু তুলতে গিয়ে শ্রমিকরা নিখোঁজ হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কাজ ঠিকমতো করা যাচ্ছে না, বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বলেন,নিখোঁজদের উদ্ধারে সর্বাত্নক চেষ্টা করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে।
দ্রুত উদ্ধার কাজ শেষ করে নিখোঁজদের জীবিত বা মৃত লাশ চান পরিবার।
সান নিউজ/এএন