মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : এক সময় কোরবানির ঈদে পুরান ঢাকার মানুষের সবচেয়ে বড় আর্কষণ ছিলো মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের ধবল (সাদা) গরু। কিন্তু কালের বির্বতনে এখন ধবল গরু চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী এখন আর নেই মীরকাদিম। পুরান ঢাকায় চাহিদা থাকলেও এখন এ সমস্ত গরুর চাহিদা বেড়েছে সমগ্র দেশ জুড়ে তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গরু ক্রেতারা এ সমস্ত গরুগুলো খামারেই এসে কিনে নিয়ে যান। পুরান ঢাকার অভিজাত-শৌখিন লোকজনও খামারে এসে অনেক দাম দিয়ে এ সমস্ত গরু কেনেন। চাহিদা অনুযায়ী এখন ধবল গরু এখন কম রয়েছে। ইতোমধ্যে মিরকাদিমের খামারগুলোতে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন : সার্কিট হাউসে আগুন
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিমের এই গরুর খামারগুলোর পাশেই রয়েছে বড় বড় সব চাল, কুড়া, ভূসি, খৈলের আড়ৎ। এসব আড়তের মালিকরাই আড়তের আশে পাশে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার ।
নিজস্ব খামারের মীরকাদিমের ভুসি, কুঁড়াসহ বিভিন্ন উন্নতমানের গোখাদ্য, মিনিকেট চালের খুদ, এক নম্বর খৈল, ভাতের মার, সিদ্ধ ভাত, খেসারির ভুসি, গমের ভুসি, বুটের ভুসি খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। এছাড়া গরু পালনে প্রশিক্ষিত লোক নিয়োগের মাধ্যমে গরুগুলো পালন করা হয়।
আরও পড়ুন : ভোলায় ইয়াবাসহ আটক ১
খামারিরা জানান, এই গরু পালনে কোনো রকম ইনজেকশন বা গরু মোটাতাজাকরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। খামারিদের নিজস্ব মিলে ভাঙানো খৈল, বিভিন্ন প্রকার ভুসি, কুঁড়া, চালের গুঁড়া খাইয়ে পরম মমতায় লালনপালন করা হয় এই গরুগুলোকে। খামারের ভেতরের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। বাইরের কাউকে খামারের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হয় না।
মিরকাদিমের ধবল গরুর বৈশিষ্ট্য হলো এ সমস্ত গরুর চোখের পাপড়ি সাদা, নাকের সামনের অংশ সাদা, পায়ের খুর সাদা, লেজের পশম ও সারা শরীর সাদা। এই সমস্ত ধবল গরুগুলো দেখতে যেমন সুন্দর তেমন মাংস খুব সুস্বাদু। এই সাদা গরুগুলো সাধারণত এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দামের হয়ে থাকে। মুন্সীগঞ্জের কোনো হাটে এই গরু বিক্রি হয় না। আগে পুরান ঢাকার হাটে নিয়ে গরুগুলো বিক্রি করতো খামারিরা। এখন পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মিরকাদিমে এসে গরু ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন : রাঙামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ
সরেজমিনে সদর উপজেলার মিরকাদিমের বেশ কিছু খামার ঘুরে দেখা যায়, বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খামারগুলোতে লালন-পালন করা হচ্ছে গরু। মজিবুরের খামারে মোট ৫১ টি গরু আছে। এর মধ্যে ধবল জাতের গরু রয়েছে অর্ধেকের বেশি। গত বছর এই খামারে অবিক্রিত গরু ছিল ৬টি। বাকি গরুগুলো গত কোরবানি ঈদের পরে কিনে এনে খামারে লালন পালন করছেন।
ওই খামারের দেখভালের দায়িত্বে আছেন তিনজন। এর মধ্যে জিয়াউর হক নামে একজন বলেন, কয়দিন আগে যে গরম গেল ওই সময় গরুগুলোর খুব কষ্ট হচ্ছিল। গরমে বেশ কিছু গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সে সময় গরুগুলোকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। এখন গরম কমায় গরুগুলো ভালো আছে। ইতোমধ্যে খামার থেকে ১১টি বিক্রি হয়েছে। যারা কোরবানি দেয় তারাই এখান থেকে গরু কিনে খামারে রেখে গেছেন। পরে কোরবানির দু-একদিন আগে এসে নিয়ে যাবেন।
মীরকাদিম এলাকার শাহিনের খামারে মোট ৫১টি গরুর মধ্যে অন্য জাতের আছে মাত্র ৫টি। ৪৬টি সাদা ধবল জাতের গরু।
খামারের কর্মচারী রাশেদ বলেন, গত বছর কোরবানির পর এই গরুগুলো আমরা ফরিদপুর জেলার টেপাখোলা বাজার হতে কিনে এনেছি। প্রায় গরুই এক লাখ টাকার ওপরে দাম দিয়ে কিনে এনে লালন-পালন শুরু করি। সামনের কোরবানিতে গরুগুলো বিক্রি করব। এ পর্যন্ত খামারের ছয়টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। সেগুলো দুই লাখ থেকে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে বাকি গরুগুলো খামার থেকে বিক্রি হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ট্রাকচালক নিহত
মীরকাদিম এগ্রো খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মিন্টু মিয়া বলেন, আমাদের খামারে গরু আছে ১৩০টি। এর মধ্যে ৬০টি কোরবানির ঈদে বিক্রি করা হবে। আমরা মূলত খামারে দুগ্ধ উৎপাদন করি সেই সঙ্গে বিক্রির জন্যও গরু প্রস্তুত করি। আমরা যে সমস্ত গরু মোটতাজাকরণ করি ওগুলো মূলত আমাদের খামারেই উৎপাদন হয়। আমরা মা গরুগুলোকে উন্নতমানের বীজ দিয়ে এখানে গরুর বাচ্চা উৎপাদন করি মা গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করি এবং বাছুরগুলোকে লালন পালনের মাধ্যমে বড় করে বিক্রি করে থাকি। আমাদের খামরে প্রায় ১০টি গুরু আছে যেগুলোর ওজন ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি। এ গরু বাছুর গুলো আমরা খামারেই উৎপাদন করেছি।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, মিরকাদিমের ধবল গরুর জাত রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুই বছর ধরে দুটি সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমাদের পক্ষ থেকেও গরু পালনকারীদের খাবার, পালন পদ্ধতি, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, খামারিরা চাইলে কম সুদে কিংবা সুদহীন ঋণ নিতে পারবেন ব্যাংক থেকে। এক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা থাকবে। আমরাও চাই মীরকাদিমের ধবল গরুর ঐতিহ্য টিকে থাকুক।
সান নিউজ/এমআর