নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলে গেলেও পটুয়াখালীর উপকূলজুড়ে রেখে গেছে শত শত ক্ষত চিহ্ন। রেমালের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দেড় শত কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: এভারেস্টে ভারতীয় পর্বতারোহীর মৃত্যু
ঘরবাড়ি, ফসল, গাছপালা, বেড়িবাঁধ, মৎস্য, প্রাণী ও বনাঞ্চলের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা সুনাম দেবনাথ জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় মোট নিহত হয়েছেন ৩ জন। এছাড়া ঘরবাড়ি-ফসলসহ বিভিন্ন সেক্টরে শতাধিক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, জেলায় প্রাথমিকভাবে ৮৪ হাজার ৫০০ পরিবারের ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ এ ঝড়ে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ গেলেই থাকে না নেটওয়ার্ক
ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৬০৮২টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯৪টি, ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫ হাজার ৪০ হেক্টর জমির, প্রাণী সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার ২৪০টির, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৪ কিলোমিটার, ১৪ হাজার ৯২৮টি পুকুর ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৬১ হেক্টর বনঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনাম দেবনাথ জানান, এটি প্রাথমিক তথ্য। এখনো ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক হিসেব নিরুপণের কাজ চলমান আছে। পরবর্তীতে এটি আরও বাড়তে পারে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন জানান, জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগে মোট ২৪ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাতিয়ায় পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু
কোন বাঁধ কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করতে আরও ২/১ দিন সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বর্ষা মৌসুমের আগেই এ বাঁধ মেরামত করা না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।
জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম জানান, জেলায় ১৪ হাজার ৯২৮টি পুকুর, মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে যার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এছাড়া নদীর জেলেদের নৌকা, জাল, ট্রলারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা এ তালিকার বাইরে। সেগুলো যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: রেমালের তাণ্ডবে সারাদেশে নিহত ২১
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, জেলায় প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দফতর যে ক্ষতির তালিকা এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দিয়েছে, টাকার অংকে তা প্রায় ৮৪ কোটি ৫৭ লাখ। এর বাইরে ৩৮ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এগুলোর আর্থিক ক্ষতি হিসেব করলে ক্ষতির পরিমাণ আরও ৫০ কোটি বৃদ্ধি পায়। সে হিসেবে ঘরবাড়ি, ফসল, মৎস্য, প্রাণী, বাঁধ সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দেড়শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতির এ হিসেব নিরুপণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি আরও বাড়তে পারে।
সান নিউজ/এনজে