নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় বহু এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। বিভিন্ন জায়গায় ধসে গেছে দেয়াল। এসব ঘটনায় রাজধানীসহ সারাদেশে এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: বিপৎসীমার ৫০ সে.মি ওপরে মুহুরী নদীর পানি
নিহতদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ৩, চট্টগ্রামে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, লালমনিরহাট, বরগুনা, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ২১ জন।
রেমালের প্রভাবে দেশের অন্যান্য জেলার মতো ঢাকাতেও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় টিনের বেড়া, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে স্পর্শ, বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- মরিয়ম বেগম (৪৫), লিজা আক্তার (১৫), মো. রাকিব (২৫) ও আলামিন (২২)। তারা সোমবার (২৭ মে) রাতে রাজধানীর খিলগাঁও, উত্তর বাড্ডায় ও যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের আলাদা ৪টি ঘটনায় প্রাণ হারান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ৩টি মৃত্যুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু
এছাড়া উত্তর বাড্ডায় কাজ থেকে ফেরার পথে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আলামিন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহটি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে। বিষয়টি রাতেই বাড্ডা থানা পুলিশকে জানানো হয়।
বরিশালে রেমালের তাণ্ডবে সোমবার ভোর ৪টার দিকে নগরের রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের ওপরের নির্মাণাধীন দেয়াল ধসে পাশের খাবারের হোটেলের ওপর পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মী মোকসেদুর রহমান।
অপরদিকে বাকেরগঞ্জ উপজেলার চর দাড়িয়ালের বাসিন্দা জালাল সিকদার (৫৫) গাছের ডাল পড়ে মারা যান।
এ দিন ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম উমেদপুরে ঘর চাপা পড়ে আব্দুল কাদেরের স্ত্রী মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখান পৌরসভার মনির হোসেনের ৪ বছরের মেয়ে মাইশা ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাজড়া ইউনিয়নে গাছের ডাল পড়ে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) মারা গেছেন। ভোলার জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
আরও পড়ুন: ভালুকায় জমে উঠেছে নির্বাচনি প্রচারণা
সোমবার (২৭ মে) রাতে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মহিষতুলি গ্রামে ঝড়ে গাছচাপায় রেজিয়া বেগম (৭২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের তাহের উদ্দিন মুন্সির স্ত্রী।
রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) দুপুরের পর পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ স্থানে আনতে যাওয়ার পথে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
আরও পড়ুন: ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত
এছাড়া দুমকি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছচাপায় জয়নাল হাওলাদার নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড নলদোয়ানি স্লুইসগেট এলাকার বাসিন্দা।
রোববার রাতে বাউফলে ঝোড়ো হাওয়ায় একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আব্দুল করিম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বৃদ্ধ করিমের বাড়ি বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। তিনি ভিক্ষা করতেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেওয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃত স্কুলছাত্র সাইফুল ইসলাম সাগর ওই প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে শাকতলা এলাকার অলী আহমেদের ছেলে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল বাহার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত চাঁদপুরে
রোববার রাতে খুলনায় তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। লালচাঁদ মোড়ল গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামের গহর মোড়লের ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করতেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামের এক যুবক মারা গেছেন। বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় খালে তলিয়ে অজ্ঞাতনামা এক যুবক মারা গেছেন।
সোমবার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুরে টিনের চালার নিচে পড়ে বাদশা মল্লিক (৬০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছেন। নিহত বাদশা মল্লিক চিথলিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দাসপাড়া এলাকায় মৃত খবির মল্লিকের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বাবলু।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরার ৬০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
এছাড়া বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ঘরের উপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে আব্দুর রহমান বয়াতি (৫৬) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের মৃত খুতি বয়াতির ছেলে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। রোববার বিকেল থেকে ঝড়টির প্রভাব শুরু হয়। রাতে ঝড়টির কেন্দ্র উপকূলে আঘাত করা শুরু করে।
ঘূর্ণিঝড়টি বহু ঘরবাড়ি-গাছপালা উপড়ে ফেলে। এর প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে দিয়েছে জনপদ। অনেক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এছাড়া বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ। ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোট ১৯টি জেলা, উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়ন ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪টি।
সান নিউজ/এনজে