নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: ফুফু ও বোনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে গিয়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শরিফুল নামে একজন নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে গৃহবধুর আত্মহত্যা
তিনি কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বর ইউনিয়নের অনন্তপাড়া গ্রামের রহিম হাওলাদারের ছেলে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কমপক্ষে ৪-৫ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় বেরীবাঁধ টপকে জেলার রাঙ্গাবালী সদা, চরমোন্তাজ, চর আন্ডা, চর হেয়ার, চর কাসেম ও চালিতা বুনিয়ায় ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দী রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, দুপুরের জোয়ারে বেরীবাঁধ টপকে পানি লোকালয়ে ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাতে জোয়ারে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ক্ষতিগ্রস্থ বেরীবাঁধ ধ্বসে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ধেয়ে আসছে রেমাল, উপকূলে আতংক
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা এলাকার তুহিন হাওলাদার (৪২) জানান, তাদের পুরো এলাকাটি মূল ভূখন্ড থেকে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। পুরো চরে বেরীবাঁধও নেই। যেভাবে জোয়ারের পানি বাড়ছে, তাতে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
চর আন্ডায় প্রায় ৫ হাজার লোকের জন্য রয়েছে একটি মাত্র আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে ৪০০-৫০০ লোক আশ্রয় নিতে পারবে। বাকীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে থাকবে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ চর আন্ডার বেরীবাঁধ টপকে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে তলিয়ে গেছে পুরো গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তের প্রায় ২ হাজার মানুষ ইতিমধ্যে পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানি তোড়ে ভেসে গেছে মাছের ঘের ও ফসলের মাঠ।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ জালে মাছ ধরায় ৫ জেলে আটক
চালিতা বুনিয়া এলাকার ফারুক ফকির (৪৫) জানান, আগুনমুখা নদীর পেটের ভিতরে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের অবস্থান। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণপ্রান্ত দিয়ে জোয়ারের পানি বাঁধ টপকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এতে মরিচের ক্ষেত, বাদাম, মিষ্টি আলুসহ রবি ফসলের মাঠ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ২ হাজার মানুষ এ এলাকায় পানি বন্দী রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম জানান, প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোক আসতে শুরু করেছে। দুপুরের পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অর্ধলক্ষ লোক আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। সন্ধ্যার পর লক্ষাধিক লোক আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত নিরাপত্তা বাহিনী
তিনি আরও বলেন, দূর্গত এলাকার লোকদের স্বেচ্ছাসেবক, ইউপি সদস্য, চৌকিদার ও সমাজকর্মীদের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য সরকারের তরফ থেকে খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। মেডিকেল টিম ও রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও ওষুধ মজুদ আছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
সান নিউজ/এনজে