মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: প্রথম ধাপে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিক মো. গোলজার হোসেনের ওপর হামলার মামলায় হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জেলগেটে এনে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আরও পড়ুন: ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে ইসি উদ্বিগ্ন নয়
রোববার (১৯ মে) বিকেল ৪ টার দিকে গজারিয়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে সাংবাদিক মো. গোলজার হোসেনের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে প্রধান আসামি মনিরুল হক মিঠুকে আদালতে তোলে পুলিশ।
এ সময় আসামি ও বাদীর উপস্থিতিতে শুনানী হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ নানা যুক্তি দেখিয়ে আদালতের কাছে আসামির রিমান্ড বাতিল করে জামিন চায়।
শুনানি শেষে পর্যালোচনা করে পরে বিকেল ৪ টার দিকে জামিন না-মঞ্জুর করে একদিনের জন্য জেলগেটে এনে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন বিচারক। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদীপক্ষের আইনজী শহীদ-ই হাসান।
আরও পড়ুন: রাইসির মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মো. গোলজার হোসেন মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি। অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলামের পক্ষের হয়ে কাজ করছিলেন।
গত ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক, তার ভাই গাজীপুর আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইকবাল হক ও ভাতিজা তানভীর হকরা ইউনিয়নের ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করতে কেন্দ্রের বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন।
ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সবাইকে সরে যেতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হকের নির্দেশে সোহেলকে মারধর শুরু করেন তার ভাতিজা তানভীর ও তাদের লোকজন।
আরও পড়ুন: জাতীয় বাজেট অধিবেশন ৫ জুন
মারধরের সময় পাশ থেকে ছবি ও ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক গোলজার হোসেন। পরে তারা গোলজারের ওপর হামলা করেন এবং তার মুঠোফোন, পকেটে থাকা টাকা, আইডি ও পর্যবেক্ষক কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করতে থাকেন।
অন্য সাংবাদিকেরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে সাংবাদিকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে আশ্রয় নেন। সেখানে তাদের মারধরের জন্য তেড়ে আসেন মনিরুল হক ও তার ভাই ইকবাল হকসহ তাদের লোকজন। সাংবাদিকদের হত্যা ও হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা।
এ ঘটনায় পরদিন রাতে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে প্রধান করে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন সাংবাদিক গোলজার।
এছাড়া ভোটের দিন মনিরুল হকের নেতৃত্বে হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সীল মারেন মনিরুল হকের লোকজন। পুলিশ বাঁধা দিলে ককটেল ফাটিয়ে তাদের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মনিরুল হকরা।
আরও পড়ুন: সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু
এতে পুলিশের ২ সদস্যকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চেয়ারম্যান মনিরুল হককে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা করা হয়।
গত ১১ মে রাত ৯ টার দিকে পুলিশের মামলায় ঢাকার শাহজাহানপুরের একটি বাড়ি থেকে মনিরুল হককে গ্রেফতার করে। সেদিন থেকে জেলহাজতে রয়েছেন চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বুধবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এ আদেশ জারি করে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মনিরুল হক মিঠুকে।
সান নিউজ/এনজে