গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, করতোয়া ও কাটাখালি নদীর চরাঞ্চলগুলোতে মাঠের পর মাঠ ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। সবুজ আর বাদামি রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছে-গাছে ঝুলে আছে হলুদ রঙের মোচা।
আরও পড়ুন: ৪ দাবিতে চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট শুরু
অনেক গাছ থেকে মোচা কেটে নেয়া হয়েছে। আবার অনেক জমিতে চলছে ভুট্টার গাছ কাটার কাজ।
গাইবান্ধার ১৬৫ চর-দ্বীপচর আর নদনদী পাড়ে প্রায় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতেই ভুট্টা চাষ হয়েছে। কেউ মাড়াই করছে, আবার কেউ পরিষ্কার করছে। বাড়িতে ভুট্টা আসার পর পুরুষের সহযোগিতায় নারী-শিশুরাও কাজ করছে। এ যেন চরের কৃষকের আঙিনায় ভুট্টার সোনা রাঙা হাসি।
চরের মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী বলেই ভাগ্যের চাকা ঘুরছে চাষিদের। ভুট্টার ফলনে কৃষকের চোখে সোনালী স্বপ্ন, মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি। ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে তারা। প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব না পড়লে ভুট্টার ভাল দাম পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা
কৃষিবিদরা বলেন, ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। চরের কোন জমি আর পতিত নেই। যে সব চাষিদের নিজস্ব জমি নেই, তারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করে স্বচ্ছলভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।
ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। চাষিরা অধিক লাভের আশায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে। লাভবান হওয়ায় গাইবান্ধায় দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহও বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ব্যাপক হারে চাষিরা ভুট্টার চাষ করেছে।
গাইবন্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ১৭ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ ভাগই চাষ হয়েছে চরাঞ্চলের জমিতে। গত বছর জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: তাপদাহের মধ্যে খুলল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
এ বছর চাষের পরিধি বেড়ে ৭১৬ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় ভুট্টার চাষ দিন দিন বাড়ছে।
ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার কয়েকটি চরে দেখা যায়, চরের বালি মাটিতে এবার ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। চাষিরা ভুট্টার মোচা সংগ্রহ করে ঘরে তুলছে। কেউ সংগ্রহ করা ভুট্টার কলাগুলো থেকে ভুট্টা বের করছে।
বাজারজাতে নেই কোনো বিড়ম্বনা। পাইকাররা বাড়ি এসে ৯৫০-১০৫০ টাকা প্রতি মণ (৪০ কেজি) দরে ভুট্টা সংগ্রহ করছে।
সদর উপজেলার কামারজানির কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভাল হয়েছে। এক বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করতে প্রায় ২ হাজার টাকার বীজ লাগে।
আরও পড়ুন: আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর
জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রয়ের উপযোগী করার শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে তার প্রতি বিঘায় ভুট্টা চাষ করতে খরচ হয়েছে ৯-১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৩৫-৪০ মন ভুট্টা উৎপাদন হয়। এতে খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা বিঘা প্রতি লাভ হয়।
ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ১০ বিঘা জমিতে গত ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করেন। নিজের জমির
পাশাপাশি অন্যের জমি চুক্তি নিয়েও ভুট্টা চাষ করেছেন।
৪ মাসের ফসল ভুট্টা এপ্রিল মাসের মধ্যেই ঘরে চলে আসে। পরিবারের সবাই চাষে যুক্ত। এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, কৃষি ফসল হিসেবে ভুট্টা খুবই লাভজনক। চরাঞ্চলে এ ফসলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। ভুট্টা চাষে ৩৮০০ কৃষককে সরকারিভাবে প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
সান নিউজ/এনজে