নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও সুবর্ণচর উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় কয়েকটি নতুন রাস্তা পাকাকরণ ও পুরোনো সড়ক সংস্কার কাজে সিডিউল বহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: একনেকে ১১ প্রকল্পের অনুমোদন
এর মধ্যে রয়েছে- চাটখিল উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের এম হোসেন পাটেয়ারী মার্কেট থেকে ধর্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক ও ধর্মপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চিল্লার দীঘির পাড় সড়ক।
এখানে একটি প্যাকেজে ৫টি সড়কের ১৯৫৪ মিটার নতুন সড়ক পাকাকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, ১৯৫৪ মিটার নতুন সড়ক পাকাকরণের কাজের কার্যাদেশ পান মেসার্স রিয়া এন্ড স্বাদ ব্রাদার্স। এটি ঠিকাদার বাহার কোম্পানীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আরও পড়ুন: ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো হবে
কার্যাদেশ অনুযায়ী, জিএনপি-৩ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া সড়কে ৪টি কালভার্ট নির্মাণেও নিম্নমানের ইট ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ব্যবহার করা হয়। তবে ঠিকাদার বাহার কোম্পানী এ অভিযোগ নাকচ করেন।
অপরদিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমকি থেকে থানারহাট পর্যন্ত ২৯৭০ মিটার সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের এজেন্ট ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রেটার নোয়াখালী প্রজেক্ট প্রকল্পের এ কাজটি করছে মেসার্স এম এন ট্রেডাস।
এর প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় ঠিকাদার মাহমুদুল হক রনি।
আরও পড়ুন: আলফাডাঙ্গার ২৪ গ্রাম ঝড়ে তছনছ
ঠিকাদার রনি বলেন, দুটি গাড়ির ইটের খোয়া খারাপ ছিল। এরপর ভালো সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়। জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় ৪টি নতুন সড়ক পাকাকরণে ও ২টি সড়ক সংস্কারে সিডিউল বহির্ভূতভাবে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এর মধ্যে একটি হলো সুবর্ণচর উপজেলার থানার হাটের ষ্টীল ব্রিজ থেকে হাজীপুর সড়ক। সড়কটির ২৫০০ মিটার সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
জিওবি ম্যানটেনেজ প্রকল্পের এ কাজটি করছে জেলার কোম্পানীগঞ্জের ঠিকাদার মো. মাওলা। তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স জননী এন্টার প্রাইজ। এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার
ঠিকাদার মাওলা বলেন, একটি গাড়ির খোয়া ভুলে ইটভাটা থেকে দেয়া হয়। এছাড়া পুরো সড়কে ভালো ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া সুবর্ণচর বর্ডার থেকে থানার হাট ষ্টীল ব্রীজ পর্যন্ত ৩৪৫৬ মিটার সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি পিচ ঢালাইয়ে নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।
নিয়ম অনুসারে, সড়ক পরিষ্কার করে প্রাইম কোট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ হওয়ার কথা। তা না করেই শেষ করা হয়েছে কার্পেটিংয়ের কাজ। জিওবি ম্যানটেনেজ প্রকল্পের কাজটি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শাহীন ট্রেডার্স।
আরও পড়ুন: মর্টারশেলের শব্দে আতঙ্কে সীমান্তবাসী
সড়কটির কাজে তদারকিতে থাকা সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাইফুল ইসলাম দুলাল জানান, কাজটি করছে ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন।
তবে এ বিষয়ে মুঠোফোনে কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন কাজটি করছেন না বলে জানান তিনি। তবে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র নিশ্চিত করেন, কাজটি করছেন ঠিকাদার শিহাব উদ্দিন শাহীন।
সুবর্ণচর উপজেলায় নিম্নমানের কাজ হওয়া নতুন সড়কের আরেকটি হলো উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী আনছল হক সড়ক। এ সড়কের ১ হাজার মিটার নতুন রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের এজেন্ট, খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে পুকুরে মিলল ৯ কেজি ইলিশ
জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি ১ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির আহমদ ট্রেডার্স। ঠিকাদার মনির চেয়ারম্যান অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ।
এছাড়া করক্লার্ক ইউনিয়নের নোমানিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সামনের জাফানি সেন্টার থেকে এমপি প্রজেক্ট পর্যন্ত ১ হাজার মিটার সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি প্রায় ৭৫-৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ফিরোজ আহমদের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রোকেয়া কনস্ট্রাকশন। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ঠিকাদার ফিরোজের মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: কষ্টিপাথরের মূর্তি উদ্ধার
উপজেলার ১ নং চর জব্বর ইউনিয়নের ফিরিঙ্গি চৌরাস্তা থেকে নুরু পাটেয়ারী হাটের আগ পর্যন্ত ১ হাজার মিটার সড়ক নির্মাণে একেবারে নিম্নমানের এজেন্ট, ইটের খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হয়েছে। জিএনপি-৩ প্রকল্পের কাজটি বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদার হুমায়ন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারের প্রতিনিধি কিরণ দাবি করেন, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দেখেছেন আমরা মানসম্পন্ন সামগ্রী দিয়ে কাজ করছি। তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
সুবর্ণচরের চর আমান উল্যাহ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাটাবুনিয়া গ্রামের আনছার আলীর বাড়ির দরজা থেকে ছিদ্দিক মেম্বারের বাড়ির দরজা পর্যন্ত ৪২৫ নতুন সড়ক পাকাকরণে নিম্নমানের এজেন্ট ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রাম যাচ্ছেন ভুটানের রাজা
প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদার মো. মঞ্জুর রহমান। ঠিকাদার মো. মঞ্জুর বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে কোনো অভিযোগ নেই। আমি ভালো কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা প্রকৌশলী মো.রাহাত আমিন পাটোয়ারী বলেন, নিম্নমানের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।
সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো.এমদাদুল হক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর নিম্নমানের ইটের খোয়া অপসারণ করে নেয়া হয়। সুবর্ণচর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, নিম্নমানের কাজ করে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সান নিউজ/এনজে