মো. মনির হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী দুর্গম এলাকা চর মাদাখালী গ্রাম। ওই এলাকার চুরি, ডাকাতি, মাদক, সন্ত্রাসী ও খুনের মামলার একাধিক আসামি মনির বাহিনীতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এখন নতুন করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে সন্ত্রাসী মনিরসহ কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রুপ।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত বেড়ে ৬
জানা যায়, চর মাদাখালী গ্রামে নৌকা ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে পার্শ্ববর্তী গফরগাও উপজেলার ১৪ কিলোমিটার ঘুরে সড়ক পথে যাওয়া যায় ওই এলাকায়।
সেখানেই ত্রাস সৃষ্টি করছে মনির বাহিনী। সে চুরি, ডাকাতি, মাদক, জমি দখল কারবারের সাথে জড়িত। মনির ত্রিশাল ও নান্দাইল থানায় একাধিক মামলার আসামি।
গ্রামবাসী গত বছর মনির বাহিনীতে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। এতে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় মনির। তখন এলাকায় শান্তি বিরাজ করছিল। মনির জেল খেটে বের হয়ে আবারো গুন্ডাবাহিনী তৈরি করে জমি দখল ও মানুষের বাড়ি-ঘর দখল করে ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে।
আরও পড়ুন: চতুর্থ দিনের টিকিট বিক্রি শুরু
তাকে ওই এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল কিশোর গ্যাং পেছন থেকে সার্পোট দিচ্ছেন- এমন অভিযোগ করেছেন এলাকবাসী। মনির কিশোর গ্যাংয়ের সাপোর্ট নিয়ে বর্তমানে ওই এলাকায় জমি, দোকান, বাড়ি-ঘর দখল করে মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করেছে। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন এলাকবাসী।
অভিযোগে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ চর মাদাখালীর নতুন চরে মকবুল মার্কেট দখলে নেয় মনির বাহিনী। সে রাতের অন্ধকারে ২০-৩০ জন লোক নিয়ে তালা ভেঙে মার্কেট দখলে নেয়।
ওই মার্কেটে থাকা শেখ রাসেল স্মৃতি সংঘের আসবাবপত্র ভাংচুর করে তারা তালা লাগিয়ে দেয়। তাছাড়া মকবুল হোসেনের বাড়ির দেয়াল ভেঙে দিয়েছে বলে ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দেন মকবুল হোসেনের ছেলে শেখ মো. সানা উল্লাহ সোহাগ।
আরও পড়ুন: ঈশ্বরদীতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ মিয়া, হালিমা খাতুন ও রেজিয়া আক্তার বলেন, সন্ত্রাসী মনিরের কারণে অতিষ্ঠ তারা। মনিরের কারণে রাতে ঠিকমত ঘুমানোও যায় না। সে এলাকার চুরিসহ মাদক ব্যবসা করে। তাকে কেউ কিছু বললে তুলে নিয়ে মারধর করে। পুলিশ কয়দিন পরপর ধরে নিয়ে যায়, জেল খেটে আবার বের হয়ে আসে।
এখন তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে ধলা বাজারের প্রভাবশালী সামাল আকন্দের ছেলে ফাহাদ। ফাহাদ কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান, তার নিয়ন্ত্রণেই মনিরের অত্যাচার আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। সে জমি দখল ও মানুষের বাড়ি দখল করছে প্রতিনিয়তই।
সে রাতের অন্ধকারে গুন্ডা বাহিনী নিয়ে মকবুল মার্কেট দখল নিয়েছে। মনিরের ত্রাসে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে চায় না। আমরা কার কাছে গেলে বিচার পাবো। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আরও পড়ুন: আজ ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, মনিরের অত্যাচারে আমার এলাকার লোক খুবই অতিষ্ঠ। পুলিশ ধরে নিলেও কয়েকদিন জেল খেটে আবার বেড়িয়ে এসে মানুষের উপর অত্যাচার করে।
এই এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু করতে পারছে না। বর্তমানে মনিরের গ্যাং অনেক বড়। সে স্থানীয় প্রভাবশালী সামাল আকন্দ ও তার ছেলে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান ফাহাদের নেতৃত্বে মানুষের জমি-বাড়ি দখল করছে।
ফাহাদের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র, রড ও চাপতি নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। পরে ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশ আসলে আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই। আমাকে না মারতে পেরে সামালের ছেলে কিশোর গ্যাং প্রধান ফাহাদ আমার বাসায় দুই রাউন্ড গুলি করে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
এ নিয়ে আমি ত্রিশাল থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কোন প্রতিকার পাইনি। আমাকে মারার উদ্দেশ্য হলো- আমি চরমাদাখালীতে তাদের কাজে বাধা প্রধান করি। আমি বাধা না দিয়ে মনির বাহিনীকে নিয়ে তারা মানুষের জমি বাড়িঘর দখল করতে পারবে। আমি তাদের সাথে পারছি না।
এই কিশোর গ্যাংয়ের সাপোর্ট হলো প্রভাবশালী সামাল আকন্দ। তার ছেলে ফাহাদ এই গ্যাংয়ের প্রধান। তার সাথে রয়েছে খুনের মামলার আসামি সাব্বির, পল ও সন্ত্রাসী মনিরসহ দেড়-দুইশ ছেলেপেলে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার নিরিহ এলাকবাসীকে এদের হাত থেকে বাঁচান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সামাল আকন্দের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চোর-ডাকাতের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। চোর-ডাকাত আমার শত্রু। সন্ত্রাসী মনিরের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার ছেলে বা আমি কোনো কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত নয়।
আরও পড়ুন: আজ থেকে ১ ঘণ্টা বেশি চলবে মেট্রোরেল
কিছু মানুষ এগুলো ছড়াচ্ছে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বাড়িতে কম যাওয়া হয়। ঐ এলাকায় কে প্রভাব বিস্তার করছে তা আমার জানা নাই। তবে অনেক বড় বড় লোক আছে ঐ এলাকায়।
ইউপি সদস্য আনোয়ারের বাসায় আপনার ছেলে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে গুলি করেছে, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মেম্বার আনোয়ার তো কত কথােই বলবে, সবই কি সত্য। এ সময় ‘আমার সাথে তার কোনো শত্রুতা নেই’ বলে এড়িয়ে যান তিনি।
স্থানীয় বালিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল বলেন, চরমাদাখালী আমার এলাকার দুর্গম একটি এলাকা। মনিরের সাথে ঐ এলাকায় জমি নিয়ে সমস্যা হয়েছে শুনেছি। তা নিয়ে থানায় মামলাও হয়েছে। আমার কাছে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি।
আরও পড়ুন: গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত
সন্ত্রাসী মনিরকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন- এমন অভিযোগ করছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনিরকে শেল্টার দেবো কেন। আমি তো আওয়ামী লীগ করে নিজেই বেকায়দায় আছি। বর্তমান এমপি বা ক্ষমতায় যারা আছে, তারা শেল্টার দিবে। আমি প্রভাব খাটালে অন্যরা আমার বালুর ব্যবসা বন্ধ করে দিতো।
ত্রিশাল সার্কেল এএসপি অরিত সরকার বলেন, বালিপাড়া ইউনিয়নের চর মাদাখালী নতুন চরে একটি ঘর দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমি ওসি সাহেবকে নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবো। মনির বা কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেবো।
যে কিশোর গ্যাংয়ের কথা বলছেন, যদি তাদের কাছে সুনিদিষ্ট অস্ত্রের প্রমাণ পাই তাদের গ্রেফতার করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সান নিউজ/এনজে