জেলা প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোংলায় ভারতীয় মালিকানাধীন ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় সংবাদকর্মীসহ কমপক্ষে ৩০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। এছাড়া ৮ শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ভুটানের সঙ্গে তিন সমঝোতা স্মারক সই
সোমবার (২৫ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মোংলা ইপিজেডের গেটে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ওই ফ্যাক্টরির শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদের আজ সকাল থেকেই ফ্যাক্টরির সামনে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জেরে ইপিজেড ফটকে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে সংঘর্ষ হয় এবং কারখানা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ফটকের সামনে বিক্ষোভ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বেপজা সিকিউরিটি ও পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন: ট্রাকচাপায় সাবেক সেনাসদস্যের মৃত্যু
একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় শ্রমিক, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
শ্রমিকরা বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভিআইপির ৭টি প্লান্টের প্রায় ১৮০০ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। আজ সকালে কাজে এসে এমন খবর শুনে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা প্রতিষ্ঠানটির ৭টি প্লান্টের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
সেখান থেকে ইপিজেডের প্রধান ফটকে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের আটকে দেয়। সেখানে শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভিআইপির একটি কারখানাতে ভাঙচুর করা হয়।
আরও পড়ুন: চোরাই মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ২
কারখানার দুই নারী শ্রমিক সুবর্ণা ও তানিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমরা বেতন পাইনি। আবার কাজ থেকেও বাদ দিয়ে দিছে। এ কারণে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এতে ৩০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হইছে। কে কোথায় গেছে তা জানি না।
শ্রমিক বায়েজিদ জানান, ৮ মাস ধরে এই কোম্পানিতে আছি। কোনো নোটিশ ছাড়াই আমাদের হঠাৎ বের করে দিয়েছে। এখন কী করবো, সামনে ঈদ।
মোংলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শ্রমিকরা ইপিজেড ফটক ছেড়ে চলে গেছে। এর আগে কারখানা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মূলত সকাল ৯টা থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়।
জানা যায়, ইপিজেডের ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরি রোববার (২৪ মার্চ) তাদের প্রায় ১৮০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: এই নির্যাতনের কথা মানুষকে বলা প্রয়োজন
প্রতিষ্ঠানটি (ভিআইপি লাগেজ) জানিয়েছে, তারা নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের এক মাসের বেতন, ভাতা ও বোনাস প্রদান করেছে। তবে শ্রমিকরা বলেন, তারা টাকা পাননি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান জানান, মোংলা ইপিজেডের ভিআইপি নামের কারখানার শ্রমিকদের ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মের মধ্যে থেকেই তারা কর্মী ছাঁটাই করেছে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, তারা যথাযথ পাওনা বুঝে পায়নি। এ নিয়েই অসন্তুষ সৃষ্টি হয় এবং তারা গেটে জড়ো হয়। আমরা তাদের বুঝাতে চেষ্টা করি, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে, কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয়।
একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আশপাশে ভাঙচুর শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। অধিকাংশ কর্মী চলে গেছে। তবে অল্প কয়েকজন দূরে অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে মোংলা ইপিজেড ও ভিআইপি লাগেজ কর্তৃপক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সান নিউজ/এনজে